সারাদেশ

মনের আশা পূরণ করতে ফা‌তেমা রা‌নী তী‌র্থোৎসবে হাজারো ভক্ত

রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর: মনের বাসনা পূরণ ও পূণ্য লাভের আশায় ভক্তরা প্রায় দুই কিলোমিটার উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ অতিক্রম করেন। পাহাড়ি পথে প্রতিটি মোমবাতির আলোর ঝলকানিতে যেনো বয়ে আনে শান্তির বার্তা।

আলোক শোভাযাত্রার সময় ভক্তদের কন্ঠে সমবেতভাবে উচ্চারিত হয়- ‘হে ঈশ্বর জননী, আমরা পাপী, আমাদের তুমি ক্ষমা করো’। একই সঙ্গে জপমালা হাতে প্রার্থনায় মগ্ন হন ভক্তরা।

তাদের গন্তব্য ছিল, মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত স্থান শেরপুরের নালিতাবাড়ী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লী’।

বৃহস্পতিবার থেকে এখানে শুরু হয়েছে দুদিনের ধর্মীয় বাৎসরিক তীর্থোৎসব।

সাধুলিওর ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ও তীর্থোৎসব কমিটির আহ্বায়ক তরুণ বনোয়ারি বলেন- হাজারো ভক্ত ও পূণ্যার্থীদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকালে তীর্থোৎসবের উদ্বোধন করেন ভাটিকান সিটির দূত কেভিন এস. র‌্যান্ডেল।

এরপর রাত সা‌ড়ে ৮টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় আলোক শোভাযাত্রা। রাত ১১টায় মা মারিয়ার মূর্তিকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় আরাধনা। রাত ১২টার দিকে নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশিজাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় কার্যক্রম।

শুক্রবার সকাল ৮টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহা খ্রিস্টযোগের মধ্য দিয়ে এবারের তীর্থোৎসব শেষ হবে বলে জানান তরুণ।

তরুণ বনোয়ারি বলেন-“এবারের ২৫ তম তীর্থোৎসবে হাজার হাজার দেশী-বিদেশী খ্রিস্ট ভক্তরা অংশ নিয়েছেন। এবারের উৎসবের মূল সুর ‘আশার তীর্থযাত্রী, ফাতেমা রানী মা মারিয়া’। সবমিলিয়ে এবারের আয়োজন আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আলোক শোভাযাত্রা আমাদের বিশ্বাসের প্রতীক। মোমবাতির আলো হাতে নিয়ে পাহাড়ি পথে হেঁটে চলা হাজার হাজার ভক্তের দৃশ্য প্রমাণ করে, যত বাধাই আসুক মা মারিয়ার কৃপায় আমরা আলোর পথে এগিয়ে যাব।”

সাধু লিওর ধর্মপল্লীর সংশ্লিষ্টরা জানান- ১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ ধর্মপল্লীটি। ১৯৯৮ সাল থেকে বার্ষিক তীর্থ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব। শুধু শেরপুর নয়, দেশ বিদেশের বহু ভক্ত ও পূণ্যার্থী অংশ নেন এই তীর্থ যাত্রায়।

এটি মূলত রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তবে সব খ্রিস্ট ভক্তরাই প্রতি বছর অংশ নেন এ উৎসবে।

এ তীর্থ উৎসব ইতোমধ্যে রোমান ক্যাথলিকদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তীর্থোৎসব সমাবেশ বলে খ্যাতি পেয়েছে বলে সাধু লিওর ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত তরুণ বনোয়ারি জানান।

এদিকে তীর্থ স্থানের বাইরে বিশাল এলাকা জুড়ে বসেছে বারোয়ারী মেলা। তীর্থ উৎসব নির্বিঘ্ন করতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার রাতের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Back to top button