বায়ু দূষণে এ বছর যুক্তরাজ্যেই ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে
২০২৫ সালে হাজার হাজার মৃত্যুর সঙ্গে বায়ু দূষণের সরাসরি যোগসূত্র থাকবে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে।
যুক্তরাজ্য নেতৃস্থানীয় চিকিৎসকদের করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে দেশটিতে বিষাক্ত বাতাসের কারণে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। “বায়ু দূষণকে গুরুত্বপূর্ণ এক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও” আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
‘রয়াল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস’ বা আরসিপি সতর্ক করে বলেছে, ‘বিষাক্ত বাতাস’ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করছে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কোনো ‘নিরাপদ মাত্রা’ নেই। বায়ু দূষণের কারণে একজন মানুষের গড় আয়ু প্রায় ১.৮ বছর কমে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে লেখকরা বলেছেন, “গোটা বিশ্বে মানুষের মৃত্যু ও রোগের প্রধান কিছু কারণের ঠিক পরেই রয়েছে বায়ুদূষণ”, যে তালিকার শুরুতে রয়েছে ক্যান্সার ও ধূমপানের মতো বিভিন্ন সমস্যা।
যুক্তরাজ্য সরকারকে এ সমস্যা ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে আরসিপি। একইসঙ্গে দেশটির মন্ত্রীদের প্রতি আরসিপি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন “বায়ু দূষণকে অন্যতম শীর্ষ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেন” ।
প্রতিবেদনের শুরুতে ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক স্যার ক্রিস হুইটি বলেছেন, “বায়ু দূষণ এখনও স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত হুমকি হিসেবেই রয়ে গিয়েছে, যা মানুষের পুরো জীবনজুড়ে প্রভাব ফেলছে।
“এটি এমন এক স্বাস্থ্য বিষয়ক ক্ষেত্র, যেখানে গত তিন দশকে যুক্তরাজ্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ফলে অনেক প্রধান দূষণ দেশটিতে দ্রুত কমে এসেছে। এরপরও বায়ু দূষণ এখনও দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা ও অকালমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।
“আমরা যদি সত্যিই চাই তবে বাইরের বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব। কিন্তু এর জন্য আমাদের রুম হিটিং, পরিবহন ব্যবস্থা ও শিল্পক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত ও সঠিক পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যথায় বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব হবে না।
“বায়ু দূষণ সকলের ওপর প্রভাব ফেলে, তাই এটি আমাদের সবার দায়িত্ব।”
প্রতিবেদনটিতে বায়ু দূষণের অর্থনৈতিক প্রভাবও তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে কেবল মানুষই অসুস্থ হন না, বরং এতে চিকিৎসার খরচও অনেক বাড়ে। এর ফলে বছরে প্রায় দুই হাজার সাতশ কোটি পাউন্ডের ক্ষতি হয় অর্থনীতিতে।
আরসিপি’র প্রেসিডেন্ট ড. মুমতাজ প্যাটেল বলেছেন, “বায়ু দূষণকে আর কেবল পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে না, এটি এখন একটি জনস্বাস্থ্য সংকট।
“প্রতি বছর আমরা হাজার হাজার প্রাণ হারাচ্ছি এমন এক কারণে, যা আসলে ঠেকানো সম্ভব। আর এই আর্থিক ব্যয় এত বিপুল পরিমাণের, যা আমদের আর টানতে থাকা উচিৎ নয়।
“আমরা অন্য কোনও কারণেই ৩০ হাজার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারি না। আমাদের উচিত স্বাস্থ্যকর বায়ুকে ঠিক তেমনিভাবে গুরুত্ব দেওয়া যেমন আমরা পরিষ্কার পানি বা নিরাপদ খাবারের ক্ষেত্রে দিই। এটি আমাদের মৌলিক চাহিদা, যা আমাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক বিনিয়োগ।”