বকশীগঞ্জে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা: প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মতিন রহমান বকশীগঞ্জ: জামালপুরের বকশীগঞ্জে উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার (আলো) ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এই ঘটনায় গুরুতর আহত সাথী আক্তার (আলো) বর্তমানে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এ চিকিৎসাধীন। পাঁচ দিন ধরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং সে এখনো কথা বলতে পারছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান প্রতি ক্লাস থেকে ৫ জন করে ছাত্রীকে ভূমি অফিসের কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পাঠান। প্রতিযোগিতা শেষে সাথী আক্তার আলোসহ কয়েকজন বান্ধবী মিলে মসজিদে নূরে ঘুরতে যান। সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এই ঘটনাটি নূর মোহাম্মদ তাৎক্ষণিকভাবে সাবেক প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানকে জানান। সেসময় সাবেক প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান অভিযুক্ত ছাত্রীদের ডেকে ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার জন্য সতর্ক করেন।
সাবেক প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বদলি হয়ে গেলে চলতি মাসের ১ তারিখে নূর মোহাম্মদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি প্রায়ই সাথী আক্তার আলোকে শাসাতেন এবং তার অভিভাবককে স্কুলে নিয়ে আসতে বলতেন।
সাথী আক্তার আলোর কয়েকজন বান্ধবী ও শিক্ষকদের ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ ক্লাসরুমে ঢুকে সাথীকে শাসাতে শুরু করেন এবং কেন তার অভিভাবককে আনা হয়নি তা জানতে চান। সাথী সকলের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভবিষ্যতে এমন ভুল করবে না বলে ক্ষমা চায় এবং প্রতিশ্রুতি দেয়। তবুও নূর মোহাম্মদের মন গলেনি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, হয় অভিভাবককে আনতে হবে, নয়তো তাকে টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে। এর কিছুক্ষণ পর সাথী প্রথমে নিজের হাত কাটে এবং পরে ছয়তলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, সাথী খেলাধুলায় ভালো ছিল। এর আগে সে ময়মনসিংহ পর্যন্ত খেলে এসেছে। ঘটনার দিনও সে মাঠে কাবাডি খেলেছে এবং মাঠে দাগ কেটেছে। সেদিনই তাকে কাবাডি খেলার টিম লিডার নির্বাচিত করা হয়েছিল।
এই ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ভূমিকা নিয়ে অভিভাবক ও জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর স্কুলে আত্মহত্যার চেষ্টার মতো গুরুতর ঘটনায় শিক্ষকের এমন আচরণ কতটা দায়ী, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে।
সাথী আক্তারের বড় বোন আশরাফুন নাহার আখি অভিযোগ করেছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের মানসিক চাপই তার বোনকে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “স্কুলে ভর্তির সময় অভিভাবকের নাম্বার রাখা হয়। আমার বোন যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, তিনি আমাদের কেনো জানালেন না? বার বার সাথীকেই কেন চাপ সৃষ্টি করা হলো? এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ মোবাইল ফোনে জানান, কিছুদিন আগে সাথী আক্তারসহ ছাত্রীদের ভূমি অফিসে একটি অনুষ্ঠানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা ভূমি অফিসে না গিয়ে মসজিদে নূর ঘুরতে যায়। এই ঘটনায় তিনি সাথীর অভিভাবককে তার সাথে দেখা করতে বলেন। কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও তার অভিভাবক না আসায়,আবারও তিনি সাথীকে তার অভিভাবককে আনতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি জানতে পারেন সাথী ছয়তলা থেকে লাফ দিয়েছে।