খাদ্যের সন্ধানে বকশীগঞ্জের লোকালয়ে ভারতীয় বন্য হাতি
৩০-৪০টি হাতির দুই দল নষ্ট করছে কৃষকের ফসল
মতিন রহমান, বকশীগঞ্জ: গত দুই সপ্তাহ যাবত জামালপুরের বকশীগঞ্জের লোকালয়ে অবস্থান করছে ভারতীয় বন্য হাতির দুইটি দল। খাদ্যের সন্ধানে গারো পাহাড়ে হাতির চলাচলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। নষ্ট হয়েছে সদ্য রোপন করা ধানসহ সবজির ক্ষেত। হাতি ও মানুষের দ্বন্দ থামানোর দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে- ক্ষতি পোষাতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করবেন তারা।
গত দুই সপ্তাহ যাবত উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থান করছে প্রায় ৩০টি হাতির দুইটি দল। দিনের বেলা কিছুটা গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও বিকেলের পর এরা নেমে আসে লোকালয়ে। পায়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে সদ্য রোপন করা ধান। এছাড়াও বেগুনের ক্ষেত আর আলুর ক্ষেত এসব হাতির প্রিয় জায়গা ও প্রিয় খাবার। সম্প্রতি বসতবাড়িতে হামলার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করে স্থানীয়রা।
এসব হাতি অবস্থান করছে দিঘলাকোনা, সোমনাথ পাড়া, সাতানি পাড়ার পাহাড়ি অঞ্চলে।
দিঘলাকোনা এলাকার বাসিন্দা জয় দাংগো বলেন-‘হাতির অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। আগে আগুন জ¦ালিয়ে রাখলে হাতি ভয় পেয়ে চলে যেতো বা জেনারেটর লাগালেও হতো। কিন্তু এখন এসব করা নিষেধ। তাই হাতি এখন কোনো বাধা ছাড়াই সব ফসল নষ্ট করছে।’
সোমনাথপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন-‘ভারতের বিএসএফ গেইট খুলে দেয়। তারপর হাতি আসে। বিএসএফ গেইট না খুললে তো আর হাতি আসতো না। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
সাতানি পাড়া এলাকার বাসিন্দা বাবু মিয়া বলেন-‘কয়েক দিন আগে হাতি ফসল খাওয়া শেষ করে আমাদের বসতবাড়ির দিকে যেতে ধরছিলো। আমরা বাধা দেয়ায় সেই দিন হাতি আর যেতে পারেনি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন আটকায় রাখবো। মাঠের ফসল শেষ হলেই হাতি বাড়ি-ঘরে আক্রমন করবে। তখন আমাদের কি হবে? এসব দেখবে কে?’
দীর্ঘ কয়েক বছর পর ভারতীয় বন্য হাতির এমন কান্ড দেখছে স্থানীয়রা। তাই মানুষ ও হাতির দ্বন্দ থামাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জনপ্রতিনিধির। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে- ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার পাশাপাশি বিষয়টি স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজন সমঝোতার।
বকশীগঞ্জের কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ গোলাপ জামাল বলেন-‘হাতি আমাদের প্রতিবছরই কম বেশি ক্ষতি করে। কিন্তু এবার অনেক আগেই এসেছে। বেশি ক্ষতি করছে। আমরা চাই প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করুক। আর হাতির সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানে এগিয়ে আসুক।’
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা বলেন-‘হাতির কারনে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। আর হাতির বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য প্রয়োজন সমঝোতার। আমরা দেখছি যে এই বিষয়ে কি করা যায়।’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মো. নুরুল করীম মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন-‘বন বিভাগ এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। স্থানীয় জনগনকে সাথে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা পাহারা দিচ্ছে। এছাড়াও হাতির কারনে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য বন বিভাগ তাদের পাশে আছে।’
চলতি বছরে ভারতীয় বন্য হাতির কারনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন সবে মাত্র শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে ২০১৯ সালে হাতির আক্রমনে নিহত হন সর্বোচ্চ ৩জন ব্যক্তি। এখন হাতির দলকে তার আবাসস্থলে ফেরাতে না পারলে এবারও প্রানহানি ও ব্যপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।