মেলান্দহপ্রধান খবর

৮ বছরেও নেই পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস-অধ্যাপক: জাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

মোঃ মিরাজুল ইসলাম,জাবিপ্রবি: প্রতিষ্ঠার আট বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস এবং অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক ছাড়াই চলছে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জাবিপ্রবি) । তীব্র শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত ঘাটতি এবং গবেষণায় স্থবিরতার মতো সমস্যা তুলে ধরে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস নির্মাণ, প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দ্রুত অনুমোদন এবং জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই কর্মসূচিতে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে অবিলম্বে তাদের দাবি পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে জোর আবেদন জানান।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা প্রধান দাবিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- ‘আট বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও আমরা এখন পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস পাইনি। ক্যাম্পাসে ক্লাসরুম, ল্যাব এবং আবাসন সংকট চরমে। মাত্র ১৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য ছেলেদের হলে ১২০টি ও মেয়েদের হলে ২৫০টি আসন রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।”

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বলেন-‘সবচেয়ে বড় সংকট হলো সিনিয়র শিক্ষকের অভাব। আট বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপক নিয়োগ না হওয়ায় আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক বিভাগে মাস্টার্সের থিসিস সুপারভাইজ করছেন জুনিয়র শিক্ষকরা, যা আমাদের ডিগ্রির মান এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।”

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নিরব হাসান বলেন-‘আমাদের এ ক্যাম্পাসে সাতটি বিভাগ ও ছয়টি অনুষদ থাকলেও পুরো অ্যাকাডেমিক কাঠামো চলছে মূলত প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের ওপর নির্ভর করে। আমাদের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সেখানে চেয়ারম্যানসহ সকল শিক্ষকই প্রভাষক। তারা যথেষ্ট চেষ্টা করছে কিন্তু ভালোমানের অধ্যাপক থাকলে আমরা আরো ভালো গবেষণার সুযোগ পেতাম। শুধু তাই নয়,অধ্যাপক না থাকায় প্রক্টর, দপ্তর প্রধানসহ প্রায় সব প্রশাসনিক পদই চলছে ‘ভারপ্রাপ্ত’ দিয়ে। এ সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে।’

আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী তাসনীম নুশরা বলেন-‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের এখানে হচ্ছে না। প্রতিটি বিভাগে মাত্র তিন থেকে চারটি ক্লাসরুম রয়েছে। একাধিক বিভাগে আধুনিক সরঞ্জামসহ ল্যাব নেই। ফলে প্র্যাকটিক্যাল ও গবেষণানির্ভর শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।’

রিয়াদ হাসান নামের ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন-‘বর্তমান প্রশাসন আট মাস আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বিগত সময়ে সহকারী অধ্যাপকদের একাংশ সিনিয়রিটি হারানোর আশঙ্কায় নতুন অধ্যাপক নিয়োগে আপত্তি জানিয়েছে। এখন আবার আওয়ামী-পন্থী শিক্ষকরা সহ কিছু শিক্ষক এই আপত্তি জানাচ্ছে এবং তাদের প্রমোশনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা জানাতে চাই আগে আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের বিচার করতে হবে তার পর দ্রুত অধ্যাপক নিয়োগ করতে হবে। এরপর যৌক্তিকভাবে কোন শিক্ষক আপগ্রেশনের এর উপযুক্ত হলে তা তাদের আপগ্রেশন করতে হবে, তার আগে নয়।

শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে আরো বলেছেন- “বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির সমর্থনে একটি গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নেন।

মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- ‘আমাদের ডিপিপি অলরেডি সবুজ পাতায় উঠে গেছে। মাষ্টার প্ল্যান চলছে এটি সম্পূর্ণ হলেই অ্যাপ্রুভাল নিবো। এপ্রুভ করলেই আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দিব।’

আট বছর আগে ৫৩০ একর জমি নিয়ে জাবিপ্রবির ক্যাম্পাস হওয়ার কথা থাকলেও এখন মাত্র ৩১ একর জমিতে শুরু হওয়ার কথা শুনে হতাশা হয়েছে শিক্ষার্থীরা ।

Related Articles

Back to top button