৭৬৭৯ বইয়ের গণগ্রন্থাগার এখন পাঠক শূন্য
মহসিন রেজা রুমেল,দেওয়ানগঞ্জ; জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি গণগ্রন্থাগার এখন পাঠক শূন্য। বই, পত্রিকা, বসার ব্যবস্থা, মনোরম পরিবেশ কোনটারই কমতি নেই, কমতি কেবল পাঠকের। গ্রন্থাগরটিতে খুব একটা দেখা মেলেনা বই প্রেমীদের। গ্রন্থাগার একেবারেই নিস্তব্ধ। কোনো ভিড় নেই, বই প্রেমীদের আড্ডা নেই। গ্রন্থাগারের চারদিকে বিরাজ করছে নীরবতা। এক অদ্ভুত পরিবেশ।
গতকাল রোববার সরেজমিনে উপজেলার সরকারি একেএম কলেজে অবস্থিত সরকারি গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি একে মেমোরিয়াল কলেজে অবস্থিত গ্রন্থাগারটি কলেজ খোলা থাকলে কিছু পাঠক হয়। কলেজ বন্ধ থাকলে পাঠকের সংখ্যাও কমে যায়। উপজেলার এই সরকারি গণগ্রন্থাগারটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৩ সালের ৮ জুন। গণগ্রন্থাগারটি পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১৫ সালের ১৬ মে।
সরকারি গণগ্রন্থাগার সূত্রে জানা যায়, গ্রন্থাগারটি পাঠকদের জন্য উন্মুক্তের পর কয়েক বছর বেশ ভালো পাঠক ছিল। সেই সময়ে পাঠকের আনাগোনায় মুখরিত ছিল গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ। উপজেলার সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৬৭৯টি বই রয়েছে। এর মধ্যে বাংলায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭ হাজার ৪০৬টি আর ইংরেজিতে প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে ২১৩টি। গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই, শিশুতোষ বই, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, ইতিহাস, ধর্মীয় বই, সংগীতের বই, শরীর চর্চার বই, মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভূগোল, দর্শন সহ আরও অনেক রকম বই আছে এই গ্রন্থাগারে।
এ ছাড়া প্রতিদিনের সংবাদপত্রতো আছেই। এখানে রয়েছে এক সঙ্গে বসে ১০০ জনের অধিক পাঠক বই পড়ার মতো বিশাল লাইব্রেরি।
এতো সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও কেন পাঠক নেই গ্রন্থাগারে এর উত্তর জানা নেই গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্টদের।
গ্রন্থাগারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আতিকুর রহমান বলেন- সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকে। আমরা যথাযথ নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্রন্থাগার চালু রাখি। গ্রন্থাগারে বাচ্চাদের খেলার সরঞ্জাম সহ একটি কক্ষ রয়েছে। নারী পাঠকদের বিষয়টি বিবেচনা করে এই কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা সহ মনোরম পরিবেশে বই পড়ার পরিবেশ থাকলেও গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে না। তবে কলেজ খোলা কালীন সময়ে বেশ পাঠক হয়।
উপজেলার সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোখলেছুর রহমান গ্রন্থাগারে পাঠক কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান- দেওয়ানগঞ্জ সরকারি গ্রন্থাগারে আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। মূলত আমি বকশীগঞ্জ উপজেলার সরকারি গণগ্রন্থাগারের দায়িত্বে আছি। দুই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খেতে হয়। যে কারণে পাঠক বৃদ্ধির জন্য পাঠক সেমিনার, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তবুও পাঠক বৃদ্ধির বিষয়ে জোড় চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আতাউর রহমান জানান- উপজেলায় সরকারি গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা সরকারের একটি মহৎ উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে নতুন নতুন পাঠক তৈরির কোনো বিকল্প নেই।
উপজেলার সরকারি গণগ্রন্থাগারে পাঠক বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উপজেলা সহকারী লাইব্রেরিয়ানকে নির্দেশনা দেয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।