‘৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলে জামালপুরের চেহারা পাল্টে যাবার কথা’- জ্বালানি উপদেষ্টা
জামালপুরের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি
এম আর সাইফুল, মাদারগঞ্জ: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন— “আমি ২০০৮ সালে প্রথম জামালপুরে এসেছি। তখন আমি সরকারের বিদ্যুৎ সচিব ছিলাম। খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, জামালপুর জেলার কোনো দৃশ্যমান উন্নতি আমি দেখিনি। কিছু ভবন নির্মাণ হয়েছে ঠিকই। শুনেছি এখানে নাকি ৬০ হাজার কোটি টাকা উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে। এত টাকার প্রকৃত ব্যবহার হলে জামালপুরের চেহারা বদলে যাওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে এমন কিছু আমরা দেখিনি। যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারাও এখন আর নেই। আপনারা যদি জবাবদিহি চান, তারও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
শুক্রবার (৪ জুলাই) জুমার নামাজের পর জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের তারতাপাড়া এলাকায় জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন- “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, স্মরণকালের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন করতে হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভালো নির্বাচন মানে, ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে পারবেন এবং ভোটগ্রহণ শেষে সবার সামনে খোলামেলা পরিবেশে ভোট গণনা হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা কোনো দলের সমর্থক নই। যেই নির্বাচিত হোক, তাকে আমরা স্বাগত জানাব। তবে যদি সঠিকভাবে কাজ না করা যায়, তবে ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। তাই এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করুন, যিনি প্রকল্পের টাকা যথাযথভাবে সঠিক স্থানে ব্যয় করবেন। এমন কেউ নয় যিনি পালিয়ে যাবেন, বরং যিনি এলাকাতেই থাকবেন। আশা করি, আমরা একটি সফল নির্বাচন আয়োজন করতে পারব।”
জ্বালানি সংকট বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন- “দেশে জ্বালানির সংকট রয়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় নতুন করে আরও ২০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে জামালপুর-১ কূপে যেটুকু গ্যাস পাওয়া গেছে তা আশানুরূপ নয়। দৈনিক গড়ে ৪-৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। এই কূপ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আরেকটি কূপ খননের পরিকল্পনা আছে। সেই কূপ খননের পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। এর আগে টুডি, থ্রিডি সার্ভে করে সম্ভাবনা যাচাই করা হবে।”
তিনি আরও বলেন- “এখানে যে গ্যাস পাওয়া যাবে তা নষ্ট করা হবে না। এজন্য একটি মোবাইল প্রসেসিং প্ল্যান আনা হবে। কারণ কূপ থেকে পাওয়া কাঁচা গ্যাস সরাসরি ব্যবহার করা যায় না, তা পরিশোধন করতে হয়। এখানে যদি বড় কোনো গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া যায় তবে বড় বিনিয়োগের চিন্তা করা হবে। আপাতত মোবাইল প্রসেসিং প্ল্যানের মাধ্যমে পরিশোধন করে স্থানীয় শিল্প কারখানায় সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।”
উপদেষ্টা আরও বলেন-“সকল সরকারি ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন করা হবে। এসব সোলারে ব্যাটারি থাকবে না। সরাসরি সোলার থেকে বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত করা হবে। এতে সরকারের ব্যয় অনেকটাই কমে আসবে।”
পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) আয়োজনে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক, জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমসহ অনেকে।
পরে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মাদারগঞ্জ সোলার প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন