আওয়ামী লীগ সভাপতি বাদশা’র সম্পদের তথ্য গোপন: দুদকের মামলা
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
সম্পদের তথ্য গোপন ও অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করায় এই মামলা করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়,জামালপুর।
ছানোর হোসেন বাদশা জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার তারাকান্দি পোগলদিঘা গ্রামের মৃত গোলাপ উদ্দিনের ছেলে।
১৬ জুলাই বুধবার সকাল ১০টায় দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, জামালপুরের সহকারী পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান বাদী হয়ে এই এজাহার দায়ের করেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় জামালপুরের উপ সহকারী পরিচালক মোঃ জিহাদুল ইসলাম দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় এজাহারটি দায়ের করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়- ছানোয়ার হোসেন বাদশা’র অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। বাদশা ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে অবৈধ/জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের কাছে পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারী করা হয়। ছানোয়ার হোসেন বাদশা ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখে যে- তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৬০৮ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ । মোট ২ কোটি ৮৫ লাখ ০৪ হাজার ৪০৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য ঘোষণা করেছেন তিনি। সেসব সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের সময় ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৬০৮ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ। মোট ৫ কোটি ০২ লাখ ৩০ হাজার ০১৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়- ছানোয়ার হোসেন বাদশা ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৬০৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদর্শন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়াও ছানোয়ার হোসেন বাদশা ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ফরম এ-তে তার নামে ৮৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯০৬ টাকার দায়-দেনা ঘোষণা প্রদান করেন। যাচাইয়ের সময় তার গ্রহণযোগ্য দায়-দেনার পরিমাণ পাওয়া যায় ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৫২ টাকা।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়- ছানোয়ার হোসেন বাদশা’র আয়কর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত তিনি মোট আয় করেছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৭০৯ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় করেছেন ৫০ লাখ ০২ হাজর ৪৫৮ টাকা। ব্যয় বাদে তার নীট সঞ্চয় পাওয়া যায় ৮৫ লাখ ১৪ হাজার ২৫১ টাকা। তার গ্রহণযোগ্য দায়-দেনার তথ্য পাওয়া যায় ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৫২ টাকার। দায়-দেনাসহ তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৩ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ছানোয়ার হোসেন বাদশা তার নিজ নামে এবং তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৭ টাকা মূল্যমানের স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৬০৮ টাকা মূল্যমানের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৫ কোটি ০২ লাখ ৩০ হাজার ০১৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায় ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩১২ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসংগতিপূর্ণ ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩১২ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করে তা নিজ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন ছানোয়ার হোসেন বাদশা। তাই এই বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় জামালপুরের সহকারী পরিচলাক (মামলার বাদী) মোঃ কামরুজ্জামান মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন- অভিযুক্ত ছনোয়ার হোসেন বাদশা তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরনীতে তথ্য গোপন করেছেন এবং দুদক অনুসন্ধান করলে তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ পাওয়া গেছে। ফলে তার বিরুদ্ধে দুদক এই মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত স্বাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।