বকশীগঞ্জপ্রধান খবর

বকশীগঞ্জে ফলাফল বিপর্যয়: চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাসের হার শূন্য

মতিন রহমান, বকশীগঞ্জ: ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়- উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পাসের তুলনায় ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজে। যেখানে মানবিক শাখা থেকে অংশ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থীই কৃতকার্য হতে পারেনি।

অপ্রত্যাশিত এই ফলাফলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মাঝে গভীর হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

কলেজ থেকে জানা যায়- এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে মোট ৬ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করে। এর মধ্যে ৪ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়। অংশগ্রহণকারী চারজনই অকৃতকার্য হয়েছেন। অর্থাৎ পুরো মানবিক বিভাগ থেকে কেউ পাস করতে পারেনি।

চন্দ্রবাজার রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- আমরা অত্যন্ত হতাশ। কেন এমন হলো, তা খতিয়ে দেখতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীতে শিক্ষার মানোন্নয়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উপজেলার প্রথম সারির কলেজগুলোর ফলাফলের চিত্রও হতাশাজনক। বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজে মোট ৭০৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ২৩০ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৪৭৯ জন। কলেজটি থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৮ জন। খাতিমুন মঈন মহিলা ডিগ্রী কলেজে মোট ২৬৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭৯ জন, যেখানে ১৮৬ জন অকৃতকার্য হয়েছে । কলেজটিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন।

একইভাবে, আলহাজ্ব আমানুজ্জামান মডার্ন কলেজে ২৯৬ জনের মধ্যে ১২৫ জন পাস ও ১৭১ জন অকৃতকার্য হয়েছে। নিলক্ষিয়া পাবলিক কলেজে ৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৫ জন পাস করেছে। রাহেলা কাদির স্কুল অ্যান্ড কলেজেও ৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কেবল ১ জন পাস করতে পেরেছে।

এ বছর বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাধারণ শাখায় গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৩.৩৩ শতাংশ। সাধারণ শাখায় মোট ১৩২০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪৪০ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৮৮০ জন। সাধারণ শাখায় মোট জিপিএ-৫ অর্জন করেছে ১৮ জন। তবে বিএমটি শাখায় পাসের হার ৫৯.০৬ শতাংশ এবং আলিম পরিক্ষায় ৭৯.৮৮ শতাংশ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ জহুরুল হোসেন এই পরিস্থিতিকে ‘খুবই হতাশাজনক’ উল্লেখ করে বলেন- “একটি কলেজে কেউ পাস করেনি—এটি মানা যায় না। কিভাবে পাঠদান করা হয়, তা খতিয়ে দেখা হবে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং এত অবনতি কেন হলো, সে কারণ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিব।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতি. দায়িত্ব) মোহাম্মদ আজাদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন-“একটি প্রতিষ্ঠানের একটি বিভাগে সকল শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়াটা দুঃখজনক। এই চরম ব্যর্থতা স্কুল অ্যান্ড কলেজটির সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।”

Related Articles

Back to top button