লাইফস্টাইল

আশি নব্বই দশকের ধারায় ফিরছে নতুন প্রজন্ম

কিছু ‘ফ্যাশন ট্রেন্ড’ কখনই হারিয়ে যায় না। শুধু একটু সময় নিয়ে আবার ফিরে আসে নতুন রূপে, নতুন প্রজন্মের ভালোবাসায়।

আশির ও নব্বইয়ের দশকের সেই ফ্যাশন, যেগুলো একসময় জনপ্রিয় ছিল, আবার ফিরে এসেছে ‘জেন জি’দের মাঝে।

রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্যাশন পর্যবেক্ষক ও লেখক চেরিফা আকিলি। যিনি নিজে আশির দশকে বেড়ে উঠেছেন এবং বর্তমানে তার দুই মেয়ে ‘জেনারেশন জেড’ একই ফ্যাশনের নতুন রূপ উপভোগ করছে।

চেরিফা বলেন, “আমি যদি জানতাম আমার মেয়েরা একদিন আমার পুরানো ফ্যাশন পছন্দ করবে, তাহলে হয়ত আমি সেগুলো এত আগেই ফেলে দিতাম না।”

এখনকার তরুণরা পুরানো ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে নস্টালজিয়া, নিজস্বতা এবং স্টাইলের জন্য।

বাবল স্কার্ট

আশির দশকে প্রচুর বাবল ড্রেস এবং বাবল স্কার্ট দেখা যেত। যদিও চেরিফা নিজে সে সময় এটি পছন্দ করতেন না, আজকের নতুন প্রজন্ম এই স্কার্টকে আরও আধুনিকভাবে উপস্থাপন করছে।

আগের চেয়ে কম ‘পাফি’ বা ফোলা কম ও বেশি পরিপাটি এই স্কার্ট এখন অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বৈশাখ, পূজা বা ‘গার্লস গ্যাদারিং’–এ এমন স্কার্ট নতুন ফ্যাশনের অনুষঙ্গ পরতে দেখা যায় নতুন প্রজন্মের তরুণীদের।

মেরি জেন শু

চটি ধরনের এই জুতা সাদামাটা হলেও আরামদায়ক। নব্বইয়ের দশকে এই জুতা ছিল অনেকের প্রিয়, বিশেষ করে স্কুলগার্ল স্টাইল হিসেবে।

এখন আবার এটি ফিরে এসেছে পাতলা স্ট্র্যাপ বা ফিতা আর কম ভারি ডিজাইনে।

চেরিফা বলেন, “আমার সময়ের জুতাগুলোর তলা অনেক ভারি ছিল, এখনকারগুলো অনেক হালকা ও পরার জন্য সুবিধাজনক।”

রাস্তাঘাটে চলাচল বা ক্যাম্পাসে হাঁটতে এই ধরনের জুতা হতে পারে স্টাইল আর আরামের এক দারুণ সমন্বয়।

জেলি এক্সেসরিজ

আশির দশকে প্লাস্টিকের তৈরি রঙিন অ্যাক্সেসরিজ ছিল অতি পরিচিত। জেলি ব্যাগ, জেলি জুতা, ব্রেসলেট, এমনকি ঘড়িও।

প্লাস্টিক হওয়ায় এগুলো সহজে ধোয়া যেত, নানান রংয়ে পাওয়া যেত, আর দামে ছিল সাশ্রয়ী। তবে পরিবেশবান্ধব না হওয়াতে এবং আরামের অভাবে এখন অনেকে এগুলো এড়িয়ে চলেন।

চেরিফার মতে, “জেলি জুতা গরমে পায়ে ঘাম ধরে, আর পরে সেই চিহ্ন রয়ে যায়।”

ফলে অনেকেই এগুলো পছন্দ করলেও বেশি সময় পরার উপযোগী নয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে বা ‘রেইনি ডে লুকে’ কেউ কেউ এটি ব্যবহার করলেও, দীর্ঘ সময়ের জন্য আরামদায়ক নয়।

বডিস্যুট

নব্বইয়ের দশকে বডিস্যুট ছিল স্টাইল ও সুবিধার মিশ্রণ। শরীরকে ঠিকঠাক ধরে রাখার পাশাপাশি আলাদা করে জামা গোঁজার ঝামেলাও থাকত না।

চেরিফা বলেন, “তখন ‘স্প্যানক্স’ ছিল না, তাই বডিস্যুটই ছিল ভরসা।”

বডিস্যুট পাশ্চাত্য ফ্যাশনের অংশ হলেও এখন ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের পোশাকেও।

এটি মূলত একটি একত্রে তৈরি জামা, যা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে এবং নিচে স্ন্যাপ বা হুক দিয়ে আটকানো থাকে। দেখতে অনেকটা শিশুদের ‘র‌্যাম্পার’য়ের মতো।

বডিস্যুট শরীরের সঙ্গে ভালোভাবে লেগে থাকে বলে এটি অন্য যে কোনো পোশাকের নিচে পরলে আলাদা করে জামা গোঁজার প্রয়োজন হয় না। ঢিলেঢালা স্কার্ট, প্যান্ট বা জিন্সের সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে যায়।

পার্টিতে অনেকেই এটি ব্লেজার বা শার্টের নিচে পরেন।

আবার কেউ কেউ ‘পার্টি লুকে’ সরাসরি জিন্স বা লেদার প্যান্টের সঙ্গে পরেন।

অনেকেই শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের মতো করে বডিস্যুট পরে থাকেন। তবে সঠিক কাপড় নির্বাচন করলে এটি আরামদায়ক হবে।

ক্ল ক্লিপ

চুল বাঁধার জন্য একসময় ক্লিপ ব্যবহার ছিল খুব স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষ করে ‘ক্ল ক্লিপ’ দিয়ে ফরাসি স্টাইলে চুল বাঁধা যেত খুব সহজেই।

পরে চুলের স্টাইলের দুনিয়ায় এটি কিছুটা হারিয়ে গেলেও এখন আবার ফিরে এসেছে।

চেরিফা বলেন, “মাত্র দুই সেকেন্ডে চুল সুন্দরভাবে গুছিয়ে ফেলা সম্ভব। তাই এই সুবিধা কেন হারিয়ে যাবে?”

কলেজগামী বা কর্মজীবী নারীদের জন্য এটি হতে পারে দ্রুত সাজগোজের সহজ উপায়।

লাবুবু বা কার্টুন চরিত্র স্টাইল

এটি আসলে আশির বা নব্বইয়ের দশকের পণ্যের তালিকায় ছিল না। তবে এখনকার প্রজন্ম এটিকে পুরানো ‘মঞ্চিচি’ খেলনার সঙ্গে তুলনা করছে।

ইউরোপে, বিশেষ করে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে এটি এখন একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে দেখা যাচ্ছে ব্যাগের চেইনে ঝুলন্ত ছোট লাবুবু মডেল।

শুধু স্টাইল নয়, স্মৃতি রোমন্থনের জন্যও এটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ব্যাগের চেইনের সঙ্গে ইমোজি বা কার্টুন চরিত্রের অনুষজ্ঞগুলো ঝুলিয়ে রেখেন।

স্লিপ ড্রেস

গরমকালে হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক মানেই ‘স্লিপ ড্রেস’। নব্বইয়ের দশকে এই পোশাক ছিল পার্টির স্টাইল আইকন।

এখন আবার ফিরেছে বিবাহ অনুষ্ঠান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা গ্রীষ্মের দিনে হালকা পরিধানের জন্য।

 

সূত্র: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

Related Articles

Back to top button