মাদারগঞ্জ

মাদারগঞ্জে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় ফাইনাল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

এম আর সাইফুল, মাদারগঞ্জ: জামালপুরের মাদারগঞ্জের উত্তর জোড়খালীতে অনুষ্ঠিত হলো আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় খেলার ফাইনাল প্রতিযোগিতা।

সম্প্রতি বোরো ধান কেটে ঘরে তুলেছেন চাষিরা। ফসলি মাঠ এখন সম্পুর্ণ ফাকা। সেই ফাকা মাঠে কলা গাছ পুতে তার সাথে রশি বেধে তৈরি করা হয়েছে বৃত্তাকার পথ। বৃত্তাকার পথের পাশে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষ। কেউ বসা, আবার কেউবা দাঁড়িয়ে। মাঝখানে প্রাণপণ ছুটছে সাদা-কালো, লাল খয়েরিসহ নানান রঙের ছোট-বড় অনেক ঘোড়া। তীব্র গতির লড়াই, কে-কার আগে যাবে! সম্মুখ পানে ছুটে চলা ক্ষিপ্র গতির ঘোড়ার সওয়ারিদের চোখ শেষ প্রান্তে বাঁধা লাল ফিতায়। যে করে হোক সবার আগে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে- সওয়ারির এই আকঙ্ক্ষা পূরণে ঘোড়াগুলোও মরিয়া হয়ে দৌড়ে চলেছে। মাঠভরা হাজারো দর্শক সেই দৃশ্য দেখে করতালি আর আনন্দে মেতে ওঠে।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় রোববার (৬ জুলাই) বিকালে সম্পন্ন হল ঐতিহ্যের এমন এক ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা। উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের উত্তর জোড়খালী এলাকায় এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এলাকাবাসী। ঘোড়ার টগবগ শব্দে আর দর্শকদের উল্লাসে এলাকাজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতিযোগিতায় ১০ ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের অর্ধশতাধিক ঘোড়া। দুইটি ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ৬টি ঘোড়ার মালিককে রেফ্রিজারেটর, এলইডি টিভি ও মনিটর পুরস্কার দেয়া হয় এবং আট ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ২৪টি ঘোড়ার মালিককে এলইডি টিভি, মনিটর, রাইচ কুকার, মোবাইল ফোন, সিলিং ফ্যান ও জালি ফ্যান পুরস্কার দেয়া হয়।

জাতীয় পতাকা ও পায়রা উড়িয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতার উদ্বোধন করেন মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ সাইফ।

জোড়খালী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক এহতেশাম হায়দার পারুলের সভাপতিত্বে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতায় উপস্থিত ছিলেন- নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম ডিগ্রী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল আহসান সুজন, জোড়খালী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ছাত্তার আনসারী, কলিম উদ্দিন, নিরিবিলি গুচ্ছাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহজাহান, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

দর্শনার্থীরা জানান, তারা এমন একটি ঐতিহ্যবাহী আয়োজন উপভোগ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। অনেক শিশু জীবনে প্রথমবারের মতো ঘোড়ার দৌড় দেখে উৎফুল্ল।

আয়োজক কমিটির সদস্য শাহজাদা এমরান ও মিজানুর রহমান বলেন, বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার দৌড় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এ ঐতিহ্য রক্ষা ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে এর গুরুত্ব তুলে ধরতেই এ আয়োজন। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিযোগীরা এই খেলায় অংশ নিয়েছেন। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা দেখতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ এসেছেন। দর্শনার্থীদের হইহুল্লোড় ও উৎসাহে যেন আয়োজনটি সফল হয়েছে। তারা জানান, ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

Related Articles

Back to top button