রয়েল ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ
এম আর সাইফুল,মাদারগঞ্জ: জামালপুরের মাদারগঞ্জে রয়েল ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাদিয়া আক্তার জল্পনা (২৬) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিজার অপারেশনের সময় এই ঘটনা ঘটে।
সাদিয়া উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের কাতলামারি এলাকার সৌদি প্রবাসী বিপ্লব মিয়ার স্ত্রী।
নিহতের পরিবার থেকে জানা যায়- রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাদিয়াকে বালিজুড়ী বাজারের সিএনজি স্টেশনের কাছে বেসরকারি হাসপাতাল রয়েল ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় প্রসূতি সাদিয়াকে অপারেশন থিয়েটার রুমে নেওয়া হয়। পরে ডাঃ ফারিয়া আহমেদ (সিজার) অপারেশন করেন। অপারেশনের পরপরই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত সাদিয়ার শাশুড়ি দরদি বেগম অভিযোগ করে বলেন-‘ডা. ফারিয়া ও তার সহযোগীদের ভুল অপারেশনের কারণেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এর কারণেই আমরা আমাদের ছেলের বউকে হারালাম।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রাতেই রয়েল হাসপাতালে আসেন মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ সাইফ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ আবু রাইহান।
ডা. আবু রায়হান বলেন-‘আমরা কাগজপত্র দেখে যা বুঝলাম-রোগীর অবস্থা ছিল ভেরি ক্রিটিক্যাল। মানুষের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ থাকার কথা, তার অর্ধেক ছিল রোগীর শরীরে। তাকে আগে থেকেই যদি রক্ত দিয়ে সিজারের জন্য প্রস্তুত করা হতো, তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকতো না। এ ধরনের ক্রিটিক্যাল সিজার উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে করা সম্ভব নয়।”
মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন-“আমাকে রোগীর আত্মীয়-স্বজন কল দেয়। আমি তৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলি। পরে মাদারগঞ্জ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পারি, রোগীর হিমোগ্লোবিন ছিল ৬.৭, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। রোগীর অবস্থা জটিল ছিল। এরপর তাকে সিজার করা হয়। সিজারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ পাঠানো হলে পথের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনা তদন্ত চলছে, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জামালপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুল হক বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা খুব শিঘ্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
তবে এ ব্যাপারে রয়েল ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সেলিম নামে পরিচালকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ডাঃ ফারিয়ার এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।