জামালপুরপ্রধান খবর

ইজিবাইক মালিক ও চালকদের ধর্মঘট, দুর্ভোগে যাত্রীরা

স্টাফ রিপোর্টার: জামালপুর শহরে ইজিবাইকের লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও পাঁচ দফা দাবিতে দিনব্যাপী ধর্মঘট পালন করেছে  চালক ও মালিকেরা। পরে বিকেলে প্রশাসনের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আন্দোলনকারীরা।

রোববার সকাল ছয়টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন শহরের পরীক্ষার্থী-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষ।

জামালপুর পৌরসভা কার্যালয় থেকে জানা যায়- পৌর শহরে ২০১০ সাল থেকে ইজিবাইক চলাচল শুরু হয়। গত ১৪ বছরে ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। ২০১৮ সালে সিদ্ধান্ত হয়, পৌর শহরে লাইসেন্স করা ৩ হাজার ইজিবাইক চলাচল করবে। সেই লক্ষ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়। গত সাত বছরে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আরও ৪ হাজার ৪০০ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৭ হাজার ৪০০ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে অবৈধ বাকি ৩ হাজার ৬০০ ইজিবাইক শহরে চলাচল বন্ধ করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে এখনো পুরো শহরে প্রায় ১১ হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে।

জামালপুর পৌরসভা থেকে আরো জানা যায়, প্রতিটি ইজিবাইকের লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে এক দিন লাল ও এক দিন সবুজ ইজিবাইক চলাচল করবে। এর প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেন চালক ও মালিকেরা। এতে স্বল্পদূরত্বের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক ফাঁকা। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল করছে না। যাত্রীরা হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অনেকে আবার মালামাল মাথায় নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও হেঁটে যাতায়াত করছে।

শহরের গেটপাড় এলাকায় ইজিবাইকের চালক ও মালিকেরা সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। দুই-একটি ইজিবাইক এলেই তাঁরা যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন।

ইজিবাইক চালক সোলায়মান হোসেন অভিযোগ করে বলেন- ‘ইজিবাইকের মাধ্যমে আমাদের পরিবার চলে। জামালপুর শহর খুব ছোট্ট। আগের মতো এখন আয় নেই। অথচ পৌরসভা প্রতিবছর নানাভাবে চালক ও মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। প্রতিবছর লাইসেন্স ফি বাবদ পৌরসভা ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নেয়। এবার ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করেছে। এ ছাড়া এক দিন লাল ও এক দিন সবুজ ইজিবাইক চলাচল করবে। আবার এই ইজিবাইকের রং চালক অথবা মালিককে করতে হবে। এত টাকা খরচ করা একজন চালকের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।’

গেটপাড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা ইজিবাইকের চালক মো. মুন্না বলেন-‘সারা দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। সেখান থেকে গাড়ির মালিককে দিতে হয়। চার্জ বাবদ খরচ আছে। তাহলে আমাদের থাকে কী? এর মধ্যে পৌরসভা প্রতিবছর লাইসেন্স ফি বাবদ টাকা বাড়ায়। এসব আমরা মানি না।’

সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাফি বলেন-‘দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। তবে সেটা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কেন। অন্য কোনো উপায়ে দাবি-দাওয়া আদায় করা যেত না! এভাবে হঠাৎ সব বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়।’

পরে দুপুর ২টার দিকে প্রায় হাজার খানেক ইজিবাইক মালিক ও চালক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। পরে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে দীর্ঘ বৈঠকের পর বিকেল চারটার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় আন্দোলনকারীরা।

জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন- ‘আন্দোলনাকারীদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের ৫ দফা দাবির সাথে আমরাও একমত। দুই পক্ষের আলোচনায় কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে এবং সেগুলো সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে। পরে আন্দোলনকারীরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন।’

এদিকে ধর্মঘটের কারনে বিপাকে পড়েন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ফ্রী বাইক সার্ভিসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের তাদের কেন্দ্রে পৌছাতে সহায়তা করেন।

Related Articles

Back to top button