দেওয়ানগঞ্জপ্রধান খবর

যমুনার ভয়ে বিদ্যালয় ভাঙার পর আকাশের নিচে পাঠদান

পুনঃপ্রতিষ্ঠার জায়গা নিয়ে অসন্তোষ

মহসিন রেজা রুমেল, দেওয়ানগঞ্জ: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার আশংকায় ভেঙে ফেলা হয় চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। এতে ওই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পরে শিক্ষার্থীদের দিকটি বিবেচনা করে খোলা মাঠে টিনের ছাউনি তুলে পাঠদান করছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

১৯৯৭ সালে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের চর ডাকাতিয়াপাড়া গ্রামে স্থাপিত হয় চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য ৩৩ শতক জমি দেন ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মতিউর রহমান। প্রতিষ্ঠাকালীন টিনসেড ঘর থেকে ২০১১ সালে নির্মিত হয় সরকারি দ্বিতল পাকা ভবন। চলতি বছর মে মাসের শেষের দিকে যমুনার করাল গ্রাসে বিদ্যালয়টি হুমকির সম্মুখীন হলে দ্বিতল ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর থেকেই বিদ্যালয়ের ক্লাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভেঙে ফেলা বিদ্যালয়ের জায়গা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফারাজি গ্রামে একটি ব্যাক্তি মালিকানা জমিতে গত ২৫ শে জুন থেকে অদ্যবধি খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে।

এদিকে বিদ্যালয়টি চর ডাকাতিয়াপাড়া গ্রাম থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফারাজি গ্রামে স্থানান্তর করায় ডাকাতিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে এক কিলোমিটার দুরে ফারাজি গ্রামে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করায় এ গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। এ নিয়ে তারা পূর্বের গ্রামে বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

চর ডাকাতিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আকা মিয়া বলেন- ‘বিদ্যালয়টি আমরা চরডাকাতিয়াবাসী প্রতিষ্ঠা করেছি। এই বিদ্যালয়ের সাথে আমাদের অর্থ, শ্রম ও মেধা মিশে রয়েছে। আমরা চাই বিদ্যালয়টি চরডাকাতিয়াপাড়ায় পুনঃস্থাপিত হোক।’

জসিম উদ্দিন বলেন- ‘চরডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চিকাজানী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র। কর্তৃপক্ষ যেখানে স্কুলটি স্থানান্তর করছেন সে এলাকা পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা। বিদ্যালয়টি পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলে ভোট প্রদানে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমা, পারভেজ, পিয়াস বলেন-‘স্কুলটি দূরে স্থাপন করায় তাদের যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও টিনের চালার নিচে ক্লাস করতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

জমিদাতা হাসনা হেনা বলেন- ‘আমার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান ওই বিদ্যালয়ের জমিদাতা। তিনি বেঁচে নেই। তার অবর্তমানে এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে চর ডাকাতিয়া গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনে ফের জমি দিতে রাজি আছি তবুও বিদ্যালয়টি যেন এই গ্রামেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফাতেমা সিদ্দিকা বলেন- ‘বিদ্যালয় পুনঃ স্থাপনের জায়গা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কর্তৃপক্ষ যে স্থানে স্কুলটি স্থাপন করবেন আমরা শিক্ষকগণ সেখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান- ইতিপূর্বে জায়গা নির্ধারণ নিয়ে শিক্ষক অভিভাবক সমাবেশ করা হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরের একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্বের দাতাগণ যে স্থান দিতে চান তা নদী থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে তাই সেখানে বিদ্যালয়টি স্থাপন বিধি মোতাবেক নয়।

Related Articles

Back to top button