দেওয়ানগঞ্জ

আত্মীয়দের নিয়ে গঠিত দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপি

পদ পেয়েছেন সভাপতি মিল্লাতের ছেলে, চাচা ও আত্মীয় স্বজন

স্টাফ রিপোর্টার, জামালপুর: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলনের ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। গত ২ আগস্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম ও সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ্ মো.ওয়ারেছ আলী মামুন নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি স্বাক্ষর করেন। এ কমিটি নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কমিটিতে পদ পেয়েছেন বাবা-ছেলে চারজন।

অনেক যোগ্য নেতাকে অবমূল্যায়ন ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে যোগ্যতার চেয়ে অনেককে বেশি দেওয়ার অভিযোগ করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি জামালপুর-১ আসনের (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ছেলে, চাচা, চাচাতো ভাই, ভাগ্নি জামাই ও নিকট আত্মীয়ের নাম আছে। এছাড়াও একাধিক পদধারী, বহিস্কৃত ও অযোগ্য নেতাদের পদ দেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেককেই নেওয়া হয়েছে উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে। বঞ্চিত করা হয়েছে ত্যাগী নেতাদের। এ নিয়ে সাধারন নেতা-কর্মী, ত্যাগী ও বঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়। সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচন হলেও সহ-সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিলিয়ে চার সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা দেওয়া হয়। সভাপতি হিসেবে পুনর্বহাল হোন এম.রশিদুজ্জামান মিল্লাত। আগের কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ সাদা সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়। সম্মেলনের সভা থেকেই সাবেক সাধারন সম্পাদক বাবু শ্যামল চন্দকে সহ-সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক, সভাপতির ভাগ্নি জামাই মাসুদ হাবিব পলিনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

গত ২ আগস্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন। এই কমিটি নিয়ে অনেক সিনিয়র নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা জানান- ‘অদ্ভূত একটা কমিটি হয়েছে। আমরা যাঁরা ৯০ এর আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম, এখনো দলের কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছি, আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক নিয়মে কমিটি করা হয়নি। পরিবারতন্ত্র হয়ে গেছে। এ কমিটিতে ত্যাগীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ১১ জনকে উপদেষ্টা সদস্য করা হয়েছে। সহ-সভাপতি করা হয়েছে ১৭ জনকে, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ৩ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ২ জনকে। বিভিন্ন বিষয়ের সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন আরও ৬৪ জন।

বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতির পদ ৯ টি থাকলেও গঠনতন্ত্র  উপেক্ষা করে ১৭ জনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া গঠনতন্ত্রে ৫০ জন নির্বাহী সদস্য করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। কমিটিতে সভাপতির ছেলে ব্যারিস্টার শাহাদত বিন জামান শোভনসহ ১৩ জনকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে।
এ কমিটিতে সভাপতির চাচা আনোয়ার হোসাইন লেবু প্রধানকে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাঁর তিন ছেলেও কমিটিতে পদ পেয়েছেন। বড় ছেলে জাহিদুর রহমান সঞ্চয় পেয়েছেন কোষাধ্যক্ষের পদ। মেঝো ছেলে অ্যাডভোকেট মো.সাঈদ বিন আনোয়ার সজীব পেয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এছাড়াও তিনি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। অপরদিকে ছোট ছেলে মো.জায়েদ বিন আনোয়ার নয়ন একাই রয়েছেন তিন পদে। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য, জেলা যুবদলের সদস্য ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়কের পদে আছেন। সভাপতির আত্মীয় হওয়ার সুবাদে একই পরিবারের বাবা-ছেলে চারজন পদ পেয়েছেন এবং একাধিক পদ দখল করে রয়েছেন বলে অভিযোগ ত্যাগী ও বঞ্চিতদের।

এ কমিটিতে আপন দুই ভাই শফিকুল ইসলাম শফিক তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক এবং মো: তৌফিকুল ইসলাম গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন। তাঁরা দুইজন সভাপতির চাচাতো ভাই। এছাড়া নিকট আত্মীয় মীর আলী প্রধানও পেয়েছেন প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদ।

একই পরিবার থেকে বাবা-ছেলে চারজন উপজেলা কমিটিতে পদ পাওয়াটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। এটা পরিবারতন্ত্র হয়ে গেছে। যোগ্য নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। সুবিধাভোগীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঞ্চিত নেতারা। তাঁরা বিএনপির প্রভাবশালী নেতার আত্মীয় হওয়া কেউ মুখ খোলার সাহস পান না।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার হওয়া নেতা মাহবুবুল হাসানকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। তবে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন এমন নেতার অনেককেই সন্তোষজনক স্থান দেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রশিদ সাদা বলেন, ‘কমিটি রিশাবিলিং করা হবে। জেলা বিএনপির সাথে কথা হয়েছে। তখন সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি প্রকাশ করা হবে। জেলা বিএনপির সম্মেলনের কারনে তড়িঘড়ি করে কমিটি করা হয়েছিল। বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি হবে। তখন একই পরিবারের একাধিক এবং একজন একাধিক পদে থাকার কোনো সুযোগ থাকবে না। মো.জায়েদ বিন আনোয়ার নয়ন শুধু জেলা যুবদলের সদস্য থাকবেন। এ নিয়ে সভাপতির সাথে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ্ মো.ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ‘কমিটি বাতিল করে নতুন করে কমিটি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কমিটি ভেঙে আহ্বয়ক কমিটি করা যেতে পারে। তবে কমিটিতে সংশোধন থাকলেও তা করা যেতে পারে।’

Related Articles

Back to top button