জেলা প্রশাসনের বুঝিয়ে দেয়া পুকুরে পলাতক ইউপি চেয়ারম্যানের নামে সাইনবোর্ড
স্টাফ রিপোর্টার: ৬২ শতাংশের একটি পুকুর এক পক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আবার সেই পুকুরটি নিজেদের দাবি করে ০৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ইউনিয়ন পরিষদের পলাতক চেয়ারম্যানের নামে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এতে চরম বিপদে পড়েছে কয়েকজন ভুক্তভোগী।
পুকুরটির অবস্থান জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি গ্রামে।
টানানো সাইন বোর্ডটিতে উল্লেখ করা হয়- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জামালপুর (রাজস্ব শাখা) ৪ অক্টোবর ১৯৯৩ সালের ১৬৯২ নং স্মারক এর আদেশ মূলে খাস পুকুরের মালিক ২নং শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদ। মৌজা: পিংগলহাটি, খতিয়ান নং-১, দাগ নং-২২৮/৪৪২। জমির পরিমান-০.৬২ শতাংশ। চেয়ারম্যান: ২নং শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদ।
শাহজাদী বেগম ওয়াক্ফ স্টেট-এর সম্পত্তি এই ৬২ শতাংশ পুকুর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সৈয়দা নাজনীন ও মোয়াজ্জেম হোসেনের নামে ৫ বছরের জন্য স্থায়ী ইজারা দেয়া হয়। সৈয়দা নাজনীন শরিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি গ্রামের বাসিন্দা এবং মোয়াজ্জেম হোসেন জামালপুর শহরের শাহপুর এলাকার বাসিন্দা।
ইজারা প্রাপ্ত সৈয়দা নাজনীন বেগম অভিযোগ করে বলেন-‘আমরা ইজারা নিয়েছি। এখানে সকল কাগজ পত্র বৈধ ও সঠিক রয়েছে। ইজারা নেয়ার পর ওয়াক্ফ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি তদন্ত করে। পরে ২০২৩ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে তৎকালীন এসিল্যান্ড ও শরিফপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পক্ষে দুই জন সার্ভেয়ার ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে ওয়াক্ফ শাখার একজন প্রতিনিধি পুকুর মেপে আমাদের বুঝিয়ে দেয়। এরপর আমরা সেই পুকুর খননসহ মোট ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি।’
নাজনীন বেগম আরো বলেন-‘সবকিছু ঠিক থাকলেও মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম পুকুর পাড়ে গিয়ে আামদের সাইনবোর্ডের উপর প্যানা বোর্ড টানিয়ে আসে। আমরা জানতে চাইলে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তারা আমাদের কোনো নোটিশ দেয়নি। তারা সাইনবোর্ডে শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আলম পলাতক রয়েছে। আমিনুল ইসলাম অসৎ উদ্দেশ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করে এমন কাজ করেছে।’
নাজনীন বেগম বলেন-‘ শরিফপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের এমন কর্মকান্ডে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমরা এর সঠিক বিচার চাই এবং আমাদের পুকুর ইউনিয়ন পরিষদের হস্তক্ষেপ মুক্ত চাই। এই ঘটনায় আমরা আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিবো।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম বলেন- ‘১৯৯৩ সালে এই পুকুরসহ কয়েকটি পুকুর জেলা প্রশাসন শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর ধীরে ধীরে পুকুরটি বেহাত হয়ে যায়। চলতি বছরে আমি এই ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করি। এরপর থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পুকুরটি দখল বা বুঝে নেয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দেয়। পরে আমি জানতে পারি যে একটি পক্ষ পুকুরটি ওয়াক্কফ সূত্রে পেয়ে ইজারা নিয়েছে। পরে আমি ওয়াক্ফের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য জামালপুর, ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকার ওয়াক্ফ ফাউন্ডেশনে গিয়ে খোঁজ নেই। কিন্তু সেখানে এই পুকুর নিয়ে ওয়াক্ফ সংক্রান্ত কোনো কাগজ খুজে পাইনি। পরে আমি নিশ্চিত হয় যে তাদের সকল কাগজ পত্র জাল ও ভূয়া।’
আমিনুল ইসলাম আরো বলেন-‘আমি বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে আমি সেখানে গিয়ে শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে আসি। তারা বৈধ না থাকায় তাদেরকে নোটিশ করা হয়নি আর যেকোনো সময় এই ঘটনায় মামলা হতে পারে। এরপর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশ দিবেন। আমি সেই নির্দেশ পালন করতে বাধ্য।’
এসব বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন আখতার মোবাইল ফোনে বলেন-‘গতকাল এই বিষয়ে একজন অভিযোগ করেছে। আমি তাকে বলেছি কাগজপত্র আনতে। দুই পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’




