নারীরা সঙ্গী হিসেবে রসিক পুরুষ চান যে কারণে
সাধারণ মানুষ হোক বা সেলিব্রিটি, সঙ্গী হিসেবে কেমন পুরুষ চান – জিজ্ঞেস করলে বেশিরভাগ নারী একটি গুণের কথা আবশ্যই উল্লেখ করেন। তা হলো – সেন্স অব হিউমার বা কৌতুকরসবোধ। একেক জনের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী আরও অনেক গুণের কথাই বলবেন তারা। তবে সঙ্গী যেন রসিক হয় – এই গুণটি সব নারীই চান। কিন্তু কেন?
সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলা ও কথার উত্তর দিতে পারা যেমন একটি দক্ষতা, তেমনই সঠিক সময়ে সঠিক রসিকতা করাও একটি বিশেষ দক্ষতা। কিন্তু সঙ্গীর মধ্যে এই গুণগুলো চাওয়ার পেছনে নারীদের কিছু বিশেষ কারণ আছে।
রসবোধ এমন একটি গুণ যা একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের অনেকগুলো বিষয়ের উঙ্গিত দেয়। তাই আজ (১ জুলাই) বিশ্ব কৌতুক দিবসে জেনে নিন কৌতুকরসবোধ আর কোন কোন গুণের আভাস দেয়-
১. তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও চটজলদি চিন্তা করার ক্ষমতা
রসিকতা সব সময়ই তাৎক্ষণিক হয়। একজন রসবোধসম্পন্ন মানুষ খুব দ্রুত পরিস্থিতি বোঝেন এবং এমন কিছু বলেন, যা শুনে সবাই হেসে ওঠে। অর্থাৎ একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আপনি অল্প সময়েই ধারনা করতে পারবেন তার বলা কৌতুক থেকে।
আবার কেউ যদি কোনো ভুল করে বসেন, একজন রসিক মানুষ চাইলেই সেটা নিয়ে রেগে না গিয়ে এমনভাবে মজা করে বলতে পারেন, যাতে ভুলের বিষয়টা বোঝাও হয় আবার কাউকে ছোটও করা না হয়। এই ধরনের আচরণ থেকে আপনি বুঝতে পারবেন মানুষটি অন্যের মানসিক অবস্থাকে গুরুত্ব দেন কিনা।
২. সামাজিক বুদ্ধি ও পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা
কে কী নিয়ে স্পর্শকাতর, কোন জায়গায় কোন কথা বলা উচিত নয় – এই বিষয়ে সচেতন থাকাটাই আসল রসবোধ। রসিকতা কখন বন্ধুত্ব গড়বে আর কখন সম্পর্ক নষ্ট করবে – তফাৎটা একজন রসিক মানুষ খুব ভালো বোঝেন।
৩. চাপ সামলানোর দক্ষতা ও মানসিক স্থিতিশীলতা
বিপদের মধ্যে মুখ ভার করে বসে না থেকে যদি কেউ হালকা করে পরিস্থিতিটা উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে সবাই একটু শান্ত হয়। রসিক মানুষরা সংকটেও হাসি খুঁজে নিতে পারেন। এই দক্ষতা জীবনের কঠিন মুহূর্ত মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
যেমন, চাকরির ইন্টারভিউয়ে যদি কেউ চাপের মধ্যে একটা মজার কথা বলে হালকা আবহ তৈরি করতে পারে, সেটা আত্মবিশ্বাসের পরিচয়।
৪. আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান
নিজের খুঁত, ভুল বা অদ্ভুত দিক নিয়েও যারা ঠাট্টা করতে পারে, তারা সত্যিই আত্মবিশ্বাসী মানুষ। তারা জানে, হাসলে ছোট হয় না – বরং শক্তি প্রকাশ পায়।
৫. মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করানো
রসিক মানুষদের পাশে মানুষ নিজেকে নিরাপদ বোধ করে। কারণ তারা জানে, এই মানুষটি বিচার করবে না, বরং বুঝবে ও হাসাবে। তাদের সঙ্গে থাকা মানে চাপমুক্ত থাকা।
৬. ইতিবাচক মনোভাব
রসবোধযুক্ত মানুষ কেবল মজার কথা বলেন না, তারা আশাবাদী হন। যেখানে সবাই সমস্যার ওপর ফোকাস করেন, সেখানে তারা সমাধানের পথে হালকা এক আলো ছড়িয়ে দেন।
৭. খোলা মন, সহনশীলতা ও উদারতা
রসিকতা আসে তখনই, যখন মানুষ মানসিকভাবে মুক্ত থাকেন। তারা অন্যের মতকে সহ্য করতে জানে, এবং ভিন্ন মতের মাঝেও মিল খুঁজে নিতে পারে।
৮. সৃজনশীলতা ও চিন্তার বৈচিত্র্য
রসিক মানুষেরা সবসময় একঘেয়ে নয় – তাদের ভাবনা, শব্দচয়নে থাকে অভিনবত্ব। তারা অনেক সময় কথায় ছড়া, গল্প, তুলনা, বা নাটকীয়তা এনে চমকে দেয়। মন খারাপের সময় নারীরা এমনটাই চান।
৯. যোগাযোগ দক্ষতা
ভালো রসবোধ মানুষকে সহজে মানুষের মন জয় করতে সাহায্য করে। বক্তৃতা ও আলোচনায় এমন কেউ থাকলে মানুষ তাকে মনোযোগ দিয়ে শোনে, কারণ তারা যেকোন কথা মজারভাবে বোঝাতে জানে, অথচ কথার গুরুত্ব বজায় থাকে।
১০. নেতৃত্বের গুণ
বড় নেতা হোন বা অফিস বস – যিনি কড়া কণ্ঠের বদলে মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে, তিনি বেশি জনপ্রিয় হন।
রসিকতা কর্মীদের মানসিক চাপ কমায়, দলীয় সম্পর্ক মজবুত করে, এবং একটি ইতিবাচক কর্মপরিবেশ গড়ে তোলে। অর্থাৎ, একজন রসিক মানুষের মধ্যে সহজাত নেতৃত্বের গুণ থাকে।
রসবোধ হলো এক গভীর মানবিক গুণ – যা হাসির ছলে গড়ে তোলে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সহনশীলতা, ইতিবাচকতা ও বিশ্বাসের এক অদ্ভুত জগৎ। তাই শুধু মজার কথা বলার জন্য নয়, একজন রসবোধসম্পন্ন মানুষ আসলে একটি পরিপূর্ণ চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। এই গুণগুলো প্রকাশ পায় মানুষের একটি আচরণের মধ্য দিয়েই। আর প্রতিটি নারীই চান যে তার সঙ্গী এমন হোক, যার সঙ্গে জীবনের কঠিন সময়টিও হেসে-খেলে পার করা যায়।
সূত্র: জাগোনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।