জাতীয়প্রধান খবর

মহাসড়কে মহাভোগান্তি

ঈদুল আজহার ফিরতিযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মহা ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটে সবার নাভিশ্বাস উঠেছে। এক ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগছে সাত আট ঘণ্টা। ফলে রবিবার সময় মতো অফিসে উপস্থিত হওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অনেকে।

গাড়ির অতিরিক্ত চাপের পাশাপাশি শুক্রবার দিনগত রাতে যমুনা সেতুর ওপর যানবাহন বিকল হলে এই যানজটের শুরু হয়, যা শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কমবেশি অব্যাহত ছিল।

মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, এক ঘণ্টার সড়ক যেতে সময় লাগছে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। এতে ভ্যাপসা গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই শুধু যমুনা সেতু পার হয়েছেন পাঁচ ঘণ্টায়!

রংপুরের বুলবুল আহমেদ কাজ করেন ঢাকার একটি গার্মেন্টসে। শুক্রবার রাত ১১টায় নাবিল পরিবহনে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু মহাসড়কে যানজটের কারণে শনিবার সকাল নয়টা বাজে, অর্থাৎ দশ ঘণ্টা হলেও তিনি যমুনা সেতু পার হতে পারেননি।

তিনি জানান, সবসময় রাতের ওই সময়ে রওনা দিয়ে ঢাকা ফিরেন সকাল আটটার মধ্যে। এই প্রতিবেদককে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ঈদে বাড়ি ফিরছি ভোগান্তি নিয়ে আর এখন কর্মস্থলেও ফিরছি ভোগান্তি মাথায় নিয়ে।”

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, শুক্রবার দিনগত রাত থেকে যমুনা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে টাঙ্গাইলের বিক্রমহাটি পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হ‌য়। পরে সকাল দশটার পর সেটি স্বাভাবিক হয়। দুপুর পর্যন্ত এলেঙ্গা থেকে সেতুপূর্ব পর্যন্ত পরিবহনের ধীরগতি ছিলো। এতে মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

অনেককে খোলা ট্রাক ও পিকআপে গন্তব্যে যেতে দেখা গেল। তারা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষে মহাসড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক ও পিকআপে গন্তব্যে যাচ্ছেন। তার ওপর পড়েছেন এই যানজটে। এতে নাকাল অবস্থা তাদের।

সুরাইয়া আক্তার নামে বগুড়া থেকে আসা এক যাত্রী বলেন, “ভোগান্তি আমাদের জন্য নিত্যদিনের যেন সঙ্গী হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরেছি ভোগান্তি নিয়ে এখন আবার কর্মস্থলে ফিরছি সেই ভোগান্তি নিয়ে। বাচ্চার কথা চিন্তা করতেছি। নন এসি বাসে তার কী রকম কষ্ট হচ্ছে এই এই গরমে।”

বাপ্পি নামে গাজিপুরগামী এক যাত্রী বলেন, “ভাড়াও দিলাম বেশি যাতে তাড়াতাড়ি যেতে পারি। কিন্তু কী করব। রাস্তায় যানজট থাকলে গাড়ি যাবে কীভাবে। রাস্তায় তেমন পুলিশও দেখলাম না যে এলোমেলো গাড়িগুলো সঠিক পথে পাঠাবে।”

যানজটের কারণ জানতে চাইলে যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ ও যমুনা সেতু পূর্ব থানা পুলিশ জানায়, শুক্রবার (১৩ জুন) মধ্যরাতে মহাসড়কের সেতু পূর্ব থানা এলাকা, যমুনা সেতুর ওপর পর পর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। চার পাঁচটি যানবাহন বিকলও হয়। এতে সেতুতে কয়েক দফায় টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। টোল আদায় বন্ধ থাকার কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, “ভোর রাতের দিকে সেতুর ওপরে পরপর চারটি দুর্ঘটনা ঘটে। এগুলো সরাতে যে সময়টুকু লেগেছে এর মধ্যে দু’পাশে জটলা বেধেছিল। দুর্ঘটনা কবলিত পরিবহনগুলো সরাতে সময় লেগেছিল এতে মহাসড়কের দুইপাশে যানজটে সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক ধাপে যমুনা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়েছিল।”

যমুনা সেতু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ আহমেদ বলেন, “শুক্রবার মধ্যরাতে যমুনা সেতুর ওপর পিকআপ ও ট্রাকের সংঘর্ষের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার ধীরগতি রয়েছে।”

যাত্রী দুর্ভোগ ও যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান  বলেন, “মহাসড়কে ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্ট পুলিশ কাজ করছে। হয়তোবা যাত্রীদের চোখে নাও পড়তে পারে। তবে পুলিশ মাঠে চেষ্টা করছে যাতে করে মানুষ তাদের গন্তব্য স্থলে নিরাপদে নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারে।”

Related Articles

Back to top button