মো. মিরাজুল ইসলাম, জাবিপ্রবি প্রতিনিধি
ছাত্র রাজনীতির বিভাজন ও অবিশ্বাসের বাস্তবতায় সম্প্রীতির এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করল জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জাবিপ্রবি)। কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং “সবাই আমন্ত্রিত”—এই আহ্বানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে একত্রিত হন হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ব্যতিক্রমধর্মী এই মধ্যাহ্নভোজ ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা ‘সম্প্রীতির ভোজে’ অংশ নেন প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে খাবার গ্রহণ করছেন। উপস্থিত ছিলেন বিপুলসংখ্যক নারী শিক্ষার্থী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরাও। আয়োজনে আন্তরিকতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। খাবারের তালিকায় ছিল পোলাও, মুরগি, খাসি ও গরুর মাংস। তবে ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয়টি মাথায় রেখে হিন্দু শিক্ষার্থী ও যারা গরুর মাংস খান না, তাদের জন্য খাসির মাংসের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়। এই উদ্যোগ আয়োজনে সর্বজনীনতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান আলিফ বলেন, “এই আয়োজনের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো এর সার্বজনীনতা। এখানে কে কোন দল করে বা কে কোন ধর্মের, তা বিবেচনায় আনা হয়নি। ছাত্রদল, শিবিরসহ সব মতের শিক্ষার্থী এবং হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সবাই একসাথে বসে খাবার গ্রহণ করেছে। খাবারের মানও ছিল অত্যন্ত ভালো।”
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, ছাত্রশিবিরের এই শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। এমন ইতিবাচক কর্মসূচিই শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাখে।”
আয়োজক ছাত্রশিবিরের সদস্য মোহাম্মদ মুরসালিন বলেন, “শিক্ষার্থীরাই আমাদের প্রাণ। তাদের জন্য কিছু করতে পারাটা আনন্দের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই আমরা এই আয়োজন করেছি। আমরা ভাবতেও পারিনি এতটা সাড়া পাব। শিক্ষার্থীদের এই অংশগ্রহণ আমাদের ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করবে।”
তিনি আরও জানান, “পবিত্র ঈদুল আজহার পরবর্তী এই মধ্যাহ্নভোজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করেছি। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় ৮০০ জন এই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।”
ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঈদুল আজহার কোরবানির একটি গরু ও দুটি খাসির মাংসের একটি অংশ দিয়েই এই ভোজের আয়োজন করা হয়। কোরবানির পরদিনই মাংসের একটি বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও আশপাশের দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। বাকি অংশটি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।