প্রধান খবরজামালপুর

রেলের জমি আবারো দখল করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

সৈয়দ শওকত জামান ও সাইমুম সাব্বির শোভন: জামালপুরে বরাদ্দের চেয়েও বেশি রেলের জমি দখল করেছিলেন অনেক আগেই। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এবার নতুন করে আরও জমি দখল করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। সেই জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ত্রিকোণাকার (তিন কোণা) দেয়াল।

ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুর টাউন জংশন রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীত পাশে।

অভিযুক্ত মোঃ হেলাল উদ্দিন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং জামালপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়—দীর্ঘ কয়েক বছর আগে রেলওয়ে বিভাগ থেকে স্ত্রীর নামে ৭৫০ বর্গফুট জমি বরাদ্দ পান হেলাল উদ্দিন। কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় ১০ বছর আগে সেই জমিতে গড়ে তোলেন হাবিব গেস্ট হাউজ। গেস্ট হাউজের প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ১০ কক্ষবিশিষ্ট গেস্ট হাউজ ও সামনের দোকান মিলিয়ে মোট ১৬০০ বর্গফুট জমি দখলে নেন হেলাল। বরাদ্দের চেয়ে ৮৫০ বর্গফুট জমি বেশি দখল করেন সে সময়।

আরও জানা যায়—৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই কিছুটা আত্মগোপনে থাকেন সাবেক কাউন্সিলর হেলাল। কিন্তু সম্প্রতি ১০ থেকে ১২ দিন আগে সেই গেস্ট হাউজের পেছনে আরও কয়েক শত বর্গফুট জমি দখল করে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করেন মোঃ হেলাল উদ্দিন। এরপর থেকেই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

জমি দখলের বিষয়ে সাবেক কাউন্সিলর মোঃ হেলাল উদ্দিন মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন- ‘আওয়ামী লীগ করি বলেই আমার দখলই দেখতে এলেন? স্টেশন এলাকার পূর্বে-পশ্চিমে, প্রধান সড়কের পাশে, দক্ষিণে মোখলেছ নেতার বিল্ডিং পর্যন্ত সবাই ১০/১২ বর্গফুট লিজ নিয়ে ৪০/৫০ বর্গফুট জায়গা দখল করে পাকা ইমারত গড়ে তুলেছে। নিউজ করলে তাদের বিরুদ্ধেও করেন। আমি একা না, সবাই রেলের জমির অবৈধ দখলদার।’

বন্দোবস্তের চেয়ে বেশি জমি দখল করে থাকার পরেও নতুন করে অবৈধ দখলের বিষয়ে তিনি বলেন-‘আমার স্ত্রী সেলিনা বেগমের নামে ৭৫০ বর্গফুট রেলওয়ের জমি লিজ নিয়ে সেই জায়গায় হোটেল হাবিব নামে আবাসিক হোটেল দিয়েছি। পেছন দিক থেকে হোটেলে চুরি হয়, অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত লোকজনের আনাগোনা থাকে—এই কারণেই দেয়াল করেছি, হোটেল বর্ধিত করছি না।’


তবে তিনি দাবি করেন, দুই ধাপে ৪০ বর্গফুট করে জমি পুনরায় বন্দোবস্ত (লিজ) বৃদ্ধির আবেদন করেছেন।

জামালপুরের মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন-‘রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রেলের ভূমি লিজের শর্ত ভঙ্গ করে কৃষি ও জলাশয়ের পরিবর্তে পাকা ইমারত গড়ে তুলছে দখলবাজেরা। অবিলম্বে লিজের শর্তভঙ্গকারীদের স্থাপনা উচ্ছেদ ও বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানানো হলো। অন্যথায় আমরা রাস্তায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন-‘আমরা রেলওয়ের দুই দপ্তর মিলে দখল হওয়া গেস্ট হাউজের পেছনের অংশ পরিদর্শন করেছি এবং বিষয়টি জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রেরণ করেছি। আশা করছি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) জুয়েল রানা বলেন-‘আমরা বিষয়টি জানার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। বরাদ্দের চেয়ে বেশি জমি দখলের বিষয়টি আমরা পরিলক্ষিত করি। এরপরই আমাদের দপ্তর থেকে একটি লিখিত অভিযোগ জামালপুর রেলওয়ে পুলিশ স্টেশনে জমা দেওয়া হয়। এছাড়াও দখল হওয়া জমি উচ্ছেদের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রেরণ করেছি।’

জামালপুর রেলওয়ে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন— ‘চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে আমি ছুটিতে আছি। ৯ তারিখ পর্যন্ত আমি এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। আমার অনুপস্থিতিতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাও এমন কোনো অভিযোগ পাননি। আর স্টেশনের ওই অংশ জামালপুর থানার আওতাভুক্ত। যদি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে আমি কর্তৃপক্ষকে জামালপুর থানায় অভিযোগ জমা দেওয়ার পরামর্শ দেবো।’

Related Articles

Back to top button