স্কুলের ছাদ থেকে লাফ, ৮ দিন পর ছাত্রীর মৃত্যু
মতিন রহমান,বকশীগঞ্জ: জামালপুরের বকশীগঞ্জ উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার আলো (১৩) আত্মহত্যার চেষ্টার পর অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন।
ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) তার মৃত্যু হয়।
সাথী আক্তার আলোর বড় বোন জামাই(দুলা ভাই) ওয়াসিম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন
আলোর অকাল প্রয়াণে বকশীগঞ্জসহ তার নিজ গ্রাম গোয়ালগাঁও এবং বিদ্যালয়জুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সাথী আক্তার আলো বকশীগঞ্জ পৌরসভার গোয়ালগাঁও এলাকার বাবু মিয়ার মেয়ে। গত ২১ জুলাই সোমবার বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনায় তার চাচা মুরাদ হোসেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের মুখে ২৩ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং বিপ্লব কিশোর চট্টোপাধ্যায়কে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরিবার ও সহপাঠীদের অভিযোগ ছিল, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে সাথীকে মানসিকভাবে চাপ দিচ্ছিলেন। প্রায় তিন মাস আগে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার পর সাথী ও তার বান্ধবীরা মসজিদে নূর ঘুরতে গেলে প্রধান শিক্ষক তাদের শাসন করেন। এরপর থেকেই তিনি সাথীকে বারবার অভিভাবক নিয়ে আসার জন্য চাপ দিতেন এবং স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেন। ঘটনার দিনও ক্লাসে সবার সামনে তাকে তিরস্কার করা হয়। এরপর সাথী প্রথমে নিজের হাত কেটে এবং পরে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় সাথীকে প্রথমে বকশীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার নিটোতে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছিল। তার শরীরের নিম্নাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অবশেষে, সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ২৯ জুলাই সাথী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাথী আক্তার আলো খেলাধুলায় বেশ ভালো ছিলেন এবং কাবাডি খেলায় ময়মনসিংহ পর্যন্ত খেলেছিলেন। তার আকস্মিক মানসিক অবস্থার পরিবর্তন সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছিল। তার মৃত্যুতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এবং এলাকাবাসী গভীরভাবে শোকাহত। পরিবার তার মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।