জামালপুর নিউজ টুয়েন্টিফোরে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দু’হাতবিহীন নিহালের পাশে উপজেলা প্রশাসন
এম আর সাইফুল, মাদারগঞ্জ: জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার প্রতিবন্ধী যুবক নিহালের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক গল্প প্রকাশের পর মানবিক উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়।
০৬ অক্টোবর “জীবনযুদ্ধে বিজয়ী দু’হাতবিহীন নিহালের গল্প” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খালেক এর নজরে আসে। এরপর তারা মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন নিহালের পরিবারের প্রতি।
বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও নাদির শাহ নিহালকে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৫ হাজার টাকার পণ্যসামগ্রী প্রদান করেন।
নিহালের জন্ম জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের মোসলেমাবাদ গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। ২০০২ সালে সুলতান আহম্মেদ ও খাদিজাতুন কুবরা দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় এই সাহসী যুবক। অল্প বয়সেই তিনি হারান তাঁর বাবা। মায়ের একমাত্র সন্তান নিহাল শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে বড় হয়েছেন।
২০২২ সালে এক মর্মান্তিক বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় হারান তাঁর দুটি হাত। সে সময় তিনি এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। উপজেলার নাদাগাড়ি এলাকায় ঘরের বৈদ্যুতিক তার মেরামতের সময় ঘটে দুর্ঘটনাটি।
বাবা হারানো একমাত্র ছেলেকে নিয়েই মায়ের জীবনযুদ্ধ শুরু হয় নতুনভাবে। স্বামীর মৃত্যুর পর খাদিজাতুন কুবরা আর নতুন সংসার শুরু করেননি। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ফিরে আসেন পিত্রালয়ে। কিন্তু ভাগ্য যেন আরও কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেয় তাঁদের- নিহাল হারান তাঁর দুই হাত।
তবুও হার মানেননি তিনি। দুর্ঘটনার এক বছর পর প্রতিবন্ধী শরীর নিয়েই শুরু করেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। নিজের পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন জীবনের নতুন অধ্যায়। এখন তিনিই সংসারের প্রধান উপার্জনকারী।
নিহাল বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন। তবে তাঁর মা খাদিজাতুন কুবরা এখনও কোনো সরকারি সুবিধা পাননি।
জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিহাল আজ প্রমাণ করেছেন- শারীরিক অক্ষমতা নয়, মানসিক দৃঢ়তাই মানুষকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে। তাঁর এই অনুপ্রেরণামূলক জীবনগাথা হয়ে উঠেছে সকলের জন্য সাহস ও আশার প্রতীক।