জামালপুর বিসিক শিল্প নগরী: রাজস্ব বাড়লেও দ্বৈত কর ও জমি সংকটে ব্যবসায়ীরা
শাওন মোল্লা,জামালপুর: ১৯৯০ সালের ৩০ জুন জামালপুর শহরের দাপুনিয়া এলাকায় ২৬.৩০ একর জমির মধ্যে স্থাপিত হয় বিসিক শিল্প নগরী। এই শিল্প নগরীর ১৯.৫৬ একর জমির ১৯৭টি প্লটে রয়েছে ৭৯টি শিল্প ইউনিট। যেখানে ৬৯ জন ব্যবসায়ীর আওতায় কাজ করছে প্রায় ৬০০০ শ্রমিক। যার ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক। আর বিসিকের আওতায় উদ্যোক্তা রয়েছে প্রায় চার হাজার। এর মধ্যে ৩৬৮ জন শিল্প উদ্যোক্তার মাঝে সর্বমোট সাড়ে ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিসিক থেকে জানা যায়- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারকে ৮০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে তারা। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার পেয়েছে ১৩০ কোটি টাকার রাজস্ব। এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব বেড়েছে ৫০ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন- কয়েক বছর আগেও অব্যবস্থাপনা ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণে শূন্য পড়ে থাকত বিসিক। ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করতো দিনের বেলাতেই। নতুন সড়ক নির্মাণসহ অচলাবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটায় ব্যবসা, প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে দপ্তরটির।
প্রবাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী উদ্যোক্তা শান্তনু আলম প্রবাস বলেন-‘আগে বিসিকে আসা যেত না। চারপাশে পানি ছিল, ড্রেন ভাঙা ছিল। বিসিকের আলহামদুলিল্লাহ অনেক উন্নতি হয়েছে। আমি একজন ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতা। শিল্প নগরীর অবস্থান থেকে এখন আমি সফল ব্যবসায়ী হিসেবে জামালপুর শহরে পরিচিতি লাভ করেছি।’
পাট পণ্য নিয়ে কাজ করা নারী উদ্যোক্তা সারজিয়া জাহান বলেন- ‘যেহেতু আমার কোনো শোরুম নেই, আমি কোনো ব্যাংকে ঋণ পাইনি। পরে বিসিক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে আমি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড়িয়েছি এবং আমি মাসে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি।’
প্রসাধনী ব্যবসায়ী নারী উদ্যোক্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন-‘বিসিক থেকে আমি কিছু টাকা লোন পেয়েছি। এভাবে আট মাস যাবত আমার ব্যবসা চলছে। এখন আমার ব্যবসার মূলধন দাঁড়িয়েছে ২৫-৩০ লাখ টাকার মতো। কিন্তু আমি আরও বড় অঙ্কের ঋণ বিসিক থেকে আশা করছি, যাতে আমি আরও ভালোভাবে আমার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি।’
বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত আরসিআই কোম্পানির পরিচালক রফিক আহাম্মেদ বলেন- ‘এখানে প্রায় সব জায়গাই পূর্ণ হয়েছে। অনেক চালু ইন্ডাস্ট্রি আছে। অনেক বিদেশি কোম্পানি আমাদের জামালপুর থেকেই তাদের প্রোডাক্ট তৈরি করছে। এখান থেকে ভালো মানের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে এবং সরকার এখান থেকে ভালো রাজস্ব পাচ্ছে।’

তবে দ্বৈত কর প্রদান ও জমি সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যায় আছেন ব্যবসায়ীরা। তাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পাওয়া ৫০ একর জমিতে দ্রুত কার্যক্রম শুরুর দাবি তাদের। এদিকে উদ্যোক্তারা বলছেন- প্রশিক্ষণ ও ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে উপকৃত হবেন তারা।
বিসিক শিল্প নগরী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান মিলন বলেন-‘জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি আমাদের জেলা কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠিপত্র আমরা পাইনি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি। এই জায়গাটা আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই জরুরি।
চৌধুরী ফ্যাশন অ্যান্ড হস্তশিল্প মালিক নারী উদ্যোক্তা সুবর্ণা চৌধুরী চায়না বলেন-‘আমাদের পণ্য নিয়ে যেন দুই-তিন মাস পরপর নতুন নতুন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমাদের ডিজাইন পরিবর্তনে সহযোগিতা করা এবং সেই বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া প্রয়োজন। এতোটুকুই বিসিকের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।
ইমতিয়াজ মুরাদ একজন উদ্যোক্তা বলেন- ‘এখানে যে আর্থিক সহায়তা পেয়েছি, এটি খুবই সামান্য। আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় এটি অপ্রতুল। কেউ ৫০ হাজার, কেউ এক লাখ বা দুই লাখ টাকা পেয়েছি। এটি যদি বাড়ানো যায়, তাহলে আমাদের জন্য খুবই উপকারে আসবে।’
এসব বিষয়ে বিসিক শিল্প নগরী জামালপুর-এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক সম্রাট আকবর বলেন- ‘বিসিক জামালপুরের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণের চাহিদা আছে। এটি আমরা বরাবরের মতো কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। নতুন বিসিক সম্প্রসারণ-২ প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান আছে। এটি আরও দ্রুত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।’




