জাতীয়প্রধান খবর

অনন্ত যাত্রায় ওসমান হাদি: শোকে স্তব্ধ দেশ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যায় স্তব্ধ রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ। শোক আর প্রতিবাদের প্রত্যয়ে মানুষের ঢল নামে মানিক মিয়া এভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। ওসমান হাদির অন্তিম যাত্রায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো স্মরণকালের বড় জানাজা।

শনিবার বেলা আড়াইটায় ওসমান হাদির এই জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা ছাড়াও অংশ নেন তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষ। এমনকি একজন অমুসলিমকেও দেখা যায় এই জমায়েতে। তিনি এসেছেন প্রয়াত হাদির প্রতি ভালোবাসা থেকে।

দুপুরের আগে থেকেই জনস্রোত ছিল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা অভিমুখে। চারপাশের যত সড়ক ছিল, সেখান গিয়ে আসা মানুষের গন্তব্য ছিল এখানেই।

দুপুর ১টার মধ্যে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার দুটি বড় মাঠ মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর মানুষের উপস্থিতিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর বিশাল রাজপথ ছাপিয়ে ফার্মগেটের খামারবাড়ী, আসাদগেট পর্যন্ত পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত ছিল মানুষ আর মানুষ।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও রুহুল কবির রিজভী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও এতে অংশ নেন।

জানাজা পড়ান ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। তিনি যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন লাখ লাখ মানুষ ছিলেন অশ্রুসিক্ত।

জানাজায় অংশ নিতে নাখালপাড়া থেকে আসা তরিকুল ইসলাম  বলেন, “কম হলেও ১০ লাখ মানুষ হবে। আশেপাশে সব মিলায়। ৫/৬ লাখ তো এখানেই, এটা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়।”

তরিকুলের সঙ্গে আসা বন্ধু রিফাত হোসেন বলেন, “এত বড় জানাজার কথা ইতিহাসেও পড়িনাই। আমার হাদি ভাই ৫০০ ভোট পাইলেই খুশি ছিল, সেখানে লাখে লাখে মানুষ।”

ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার জীবন থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় হামলা হয় গত ১২ ডিসেম্বর। সেদিন মাথায় গুলি করার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। তিন দিন পর তার মৃত্যুর খবর আসে।

হাদির মৃত্যুর খবর দেশে আসার পর নানা স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে জানাজায় শান্ত থাকার বার্তা দেওয়া হয় ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে।

মিরপুর থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা সাদিক মাতব্বর দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “এশিয়ার মধ্যে কারো জানাজায় এমন জনস্রোত ছিল কিনা আমার জানা নাই। সে একটা এলাকার এমপি হতে চাইছিল। আর আজ দেখেন… পুরো বাংলাদেশ তার জন্য এক হয়ে গেছে। আল্লাহ মানুষের মনের চাওয়া এমনভাবে পূরণ করে জানা ছিল না।”

৫৯ বছর বয়সী বাচ্চু মিয়া আসেন যাত্রাবাড়ী থেকে। তিনি বলেন, “এটা স্মরণকালের সবথেকে বড় জানাজা। ছেলেটাকে আল্লাহ জান্নাত দান করুক।”

সৌম্য বলে পরিচয় দেওয়া এক তরুণ ধর্মবিশ্বাসে হিন্দু। থাকেন ঢাকার আজিমপুরে। বললেন, মুসলমান না হলেও ওসমান হাদির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এসেছেন।

কেবল ঢাকা নয়, মানুষ এসেছে দূরের জনপদ থেকেও। মানিকগঞ্জ থেকে আসা নজরুল ইসলাম দুখু মিয়া বলেন, “ঢাকায় কাজ আছে। তবে ওসমান হাদির জানাজা সবার আগে।”

জানাজার পরও সড়কগুলোতে ছিল মানুষের ঢল। তারা ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ আর ‘তুমি কে আমি কে, হাদি, হাদি’ স্লোগান দিচ্ছিল।

বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে গণঅভ্যুত্থানের এই পরিচিত মুখকে সমাহিত করা হয়।

সূত্র: দেশকাল নিউজ ডটকম।

Related Articles

Back to top button