জাতীয়প্রধান খবরবকশীগঞ্জ

সাংবাদিক নাদিম হত্যার দুই বছরেও শোক কাটেনি পরিবারের

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে

মতিন রহমান, বকশীগঞ্জ:
জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার দুই বছর আজ। দুই বছরেও শোক কাটেনি নাদিমের পরিবারের সদস্যদের। শুরুর দিকে অনেকে খোঁজ নিলেও এখন এই পরিবারের খবর রাখে না কেউ। দুই বছরে বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে হতাশ নাদিমের পরিবারের সদস্যরা।

২০২৩ সালের ১৭ জুন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম ওই সময়ের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা গোয়েন্দা শাখার পর মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মামলার ২য় আসামী বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাতসহ ২৭ জনকে বাদ দিয়ে বাবু চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনের সন্তুষ্ট না হয়ে নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম আদালতে নারাজির দিলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মামলাটির তদন্তভার যায় র‍্যাবের কাছে। তবে দুই বছরেও গ্রেপ্তার হয়নি চার্জশিটভুক্ত আসামী শাহজালাল ও শফিকুল।

নিহত নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ‘প্রতিটি মুহূর্ত আমার বাবার কথা মনে হয়। বাবাকে ছাড়া আসলে বেঁচে থাকাটাই অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবারের চলা অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার মা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্বল্প আয়ে সংসার চলে না। বাবা মারা যাওয়ার পরে অনেকে অনেক আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন কেউ আর খোঁজও নেয় না।’

নাদিমের বৃদ্ধা মা আলিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “একদিন আমার ছেলে আমার কাছে একটি লুঙ্গি চাইছিলো। আমি বাজার থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে লুঙ্গি কিনে দিছিলাম। এরপর বাবা আমাকে বলছিলো যে- প্রতি বছর আমি যেনো তাকে একটা করে লুঙ্গি কিনে দেই। কিন্তু আজ ২ বছর হলো বাবা আমার লুঙ্গি চায় না।“ নাদিমের স্মৃতি মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আলেয়া বেগম আরো বলেন, “আমাদের সংসার দুইটা। বুড়া-বুড়ির এক সংসার আর নাদিমের স্ত্রী-সন্তানের এক সংসার। ছেলেটা মারা যাবার দুইটা সংসারেই খুব অভাব দেখা দিয়েছে। বেঁচে থাকতে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু জোগাড় করে চলছি আর এখন শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। “


২০২৩ সালের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের ওই সময়ের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার সহযোগিরা নাদিমকে পিটিয়ে গুরতর আহত করে। পরদিন ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেলে মৃত্যু হয় সাংবাদিক নাদিমের। ১৬ জুন বকশীগঞ্জের গুমেরচর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নাদিমকে। ১৭ জুন ওই সময়ের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম।

তবে তদন্ত চলমান ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি র‌্যাব।

Related Articles

Back to top button