রাশেদের বিয়ের ফাঁদ ও হয়রানীমূলক মামলায় দুর্বিপাকে তরুনীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাশেদ নামে এক প্রতারক ভুয়া সরকারী চাকুরীজীবি পরিচয়ে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে মানসিক,শাররিক ও যৌন নির্যাতনের এক পর্যায়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার টার্গেটে কলেজ ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সি মেয়েদের একের পর এক বিয়ে করে করছে সর্বশান্ত ।
এমনই অভিযোগ করেছে ভুক্তভুগি সরকারী আশেক মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ুয়া দরিদ্র শিক্ষার্থী হুসনে আরা।
বিয়ের পর অত্যচার নির্যাতনে আর্থিক চাপের মুখে তালাক নিয়েও মুক্তি পায়নি এই শিক্ষার্থী। রাশেদের সাথে তালাকের পর নরসিংদীতে ইমন নামে একজনের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় হুসনে আরার। বিয়ের পর হুসনে আরা এখন ৭ মাসের গর্ভবর্তী। গর্ভবর্তী হয়েও ৪টি মিথ্যা মামলা নিয়ে আদালতসহ দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিচারের আশায়। দরিদ্র পরিবারের অন্যন্য সদস্যদের একাধিক মিথ্যা মামলার জালে ফেলে হয়রানীসহ নানা হুমকী দিয়ে বেড়াচ্ছে বিয়ে রাশেদ।
ভুক্তভোগী নারী জানান- কলেজে যাওয়া আসার পথে রাশেদের নজরে পড়ে হোসনে আরা । হোসনে আরার পিছু নিয়ে বাড়ির ঠিকানা খুঁজে নেয়। ঘটক পাঠিয়ে নিজেকে সরিষাবাড়ী ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার পরিচয়ে ২০২৪ সালের ১ মে বিয়ে করে জামালপুর শহরের খুপিবাড়ি গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের মেয়ে হুসনে আরাকে। বিয়ের পর শশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করে রাশেদ। হোসনে আরার প্রয়োজনীয় খরচতো দুরের কথা উল্টো টিউশনির টাকা হাতিয়ে নেয় নানা ছলনায়। হোসনে আরাকে রাশেদের বাড়ীতে উঠিয়ে নেয়ার কথা বললে শুরু হয় টালবাহানা। এক পর্যায়ে ৭ লাখ যৌতুক দাবী করে। যৌতুকের টাকা দেওয়ার পর বাড়িতে উঠাবে হোসনে আরাকে। দরিদ্র পরিবারটি যৌতুকের ৭ লাখ টাকা রাশেদের হাতে তুলে দিতে পারেনি। টাকা না পেয়ে শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ, শাররিক ও মানসিক নির্যাতন অসহায় হোসনে আরার উপর।
ভুক্তভোগী হোসনে আরা আরো জানান- রাশেদ ভুমি অফিসে সার্ভেয়ারের চাকুরী নয়, দালালী করে। এছাড়াও বিয়ের নামে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ ভুমিদস্যুতা, জমি বিক্রির দালালীসহ অপকর্ম করে বেড়ায়। পরে হোসনে আরা রাশেদের সরিষাবাড়ীর শুয়াকৈর বড়বাড়িয়া গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় তালাকনামা পাঠিয়ে দেয় রেজেষ্ট্রি ডাকে। রাশেদ তালাক নামা গ্রহন করে। তালাকের পরও রাশেদের উৎপাতে লেখাপড়া ছেড়ে হুসনে আরা নরসিংদীতে বোনের বাড়িতে গিয়ে উঠে। হুসনে আরার জীবনের কথা চিন্তা করে পরিবার নরসিংদীতে ইমন নামে একজনের সাথে বিয়ে দেয়। প্রায় বছর খানেক ভালই চলছিল হুসনে আরা ও ইমনের দাম্পত্য জীবন।
হোসনে আরা জানান- হুসনে আরা ও স্বামী ইমন ও পারিবারের সদস্যদের নামে গরু চুরি, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরসহ একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানী শুরু করে রাশেদ। তালাক আইন মাফিক হয়নি দাবী করে রাশেদ হুসনে আরার স্বামী ইমনের নামে বউ ভাগিয়ে নেয়ার মামলা দিয়েই বসে থাকেনি। ৫০ বছরের হোসনে আরার মা সুফিয়া বেগমের নামে দিয়েছে গরু চুরির মামলা। এই মামলায় ৭ মাসের গর্ভবতী হুসনে আরাকেও আসামী করা হয়েছে। এভাবেই একের পর এক জিডি,অভিযোগ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে অভিযোগ হুসনে আরা ও তার পরিবারের।
এদিকে রাশেদ কয়েক মাসের মাথায় জামালপুর শহরের তেতুলিয়া গ্রামের আব্দুল হকের মেয়ে তসলিমা আক্তার স্মৃতিকে বিয়ে করে। বিয়ের একমাস না জেতেই তসলিমা আক্তার স্বৃতিকে তালাক দেয়। তালাকপ্রাপ্তা তসলিমা দেনমহরের দাবিতে রাশেদের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছে ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব আমলেই রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিয়ে, টাকা আদায়, মিথ্যা মামলায় হয়রানীসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর এলাকার বড় বাড়িয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে রাশেদ ওরফে এরশাদ। সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসান এমপির ক্যাডার সরিষাবাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর আশিকুর রহমান আশেকের চাচাতো ভাই। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে ডা: মুরাদ হাসানের নাম ভাঙ্গিয়ে ভুমি দস্যুতা, ভুমি সংক্রান্ত দালালিসহ নানা অপকর্ম করে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। হাসিনা সরকার পতনের পর আশেক কাউন্সিলর জনরোষ ও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্বগোপনে গেলে আওয়ামীলীগের উর্দি খোলে বিএনপির উর্দির পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি শামীম তালুকদারের আত্বীয় পরিচয়ে হুমকী ধামকীসহ ভুক্তভুগিদের দাপট দেখাচ্ছে সুচতুর রাশেদ। ফোনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় শামীম তালুকদারের সাথে ঘনিষ্ঠতা আছে সে এসব বিষয়ে সব জানে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম এ প্রতিবেদককে বলেন-‘বড় বাড়িয়ায় আমার কোন আত্বীয় নেই। কেউ পরিচয় দিলেই আত্বীয় হয়ে গেল। কেউ কোন অপকর্ম করলে দ্বায়ভার সে নিজে নিবে। রাশেদ নামে কাউকে চিনিনা।’
হুসনে আরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- ‘২৪ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর দরিদ্র মা আমাদের ভাই-বোনকে অনেক কষ্টে লেখাপড়াসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে এসেছেন। রাশেদের প্ররোচনায় এবং ঘটকের মধ্যস্থতায় আমার মা আমাকে বিয়ে দেন। রাশেদ সরকারি চাকরিজীবী এই মিথ্যা তথ্যে দিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর যখন রাশেদ তাদের বাড়ি আমাকে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকে তখনই আমার মা, ভাই, বোনদের রাশেদ সম্পর্কে সন্দেহ হয়।’
তিনি আরও বলেন-‘খোঁজ নিতে গেলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। অশান্তি শুরু হয়। জবাব চাইতে গেলে আমার উপর নামে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। রাশেদ তার ভাই পুলিশের এসআই এর প্রভাব দেখান। রাশেদের নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিয়ের সাত মাসের মাথায় সংসার ভেঙে যায়। এখন ইমনের সংসারে আমি ৭ মাসের গর্ভবর্তী। আমার স্বামী ইমনসহ আমাদের পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়েছে । শেষ পর্যন্ত ৫০ বছর বয়সী আমার মাসহ আমাদের গরু চুরির মামলাও দিয়েছে। আমার নতুন সংসার ভাঙ্গার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি এতিম অসহায়। ইমনের সাথে সংসার করে ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। এই মামলাবাজ বিয়ে প্রতারকের হাত থেকে মুক্তি চাই।’
হুসনে আরার ভাই মাহমুদুল হাসান সৌরভ বলেন-‘রাশেদের সাথে আমার বোনের বিচ্ছেদের পর আমাদের পরিবারের উপর তিনি হুমকি, হামলা, একের পর এক মামলা দিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমার বোন গর্ভবর্তী হওয়ার পরও তাকে মামলার মাধ্যমে হয়রানি করছে। আমার ভগ্নিপতি ইমন মিয়ার উপরও মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমার বোনের এই সংসারেও অশান্তির কালোমেঘ ছড়িয়ে দিয়েছে।’
হুসনে আরার বিধবা বৃদ্ধ মা বলেন-‘আমরা শান্তি মত বাঁচতে চাই। আমার মেয়ের সংসারে যেন কোন ক্ষতি না হয় সে ব্যপারে তিনি সকলের কাছে বিচার চান। মামলাবাজ প্রতারক রাশেদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।’
রাশেদ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন- ‘হুসনে আরার সাথে আমার বিয়ের তালাক হয়নি। তালাক নিয়ে প্রতারনা করেছে তারা । এ বিষয়ে মামলা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ আরো বলেন-‘আমি একাধিক বিয়ে করবো সমস্যা কি? অন্যের সমস্যা কোথায়? আমি আইন জানি ও মানি। আইন মোতাবেক হুসনে আরা ও ওর পরিবার রক্ষা পাবেনা শাস্তি হবেই।’