নাম গোপন রেখে স্ত্রীর নামে ভিজিডি কার্ড নিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
সাকিব আল হাসান নাহিদ, মেলান্দহ: দরিদ্র ও অসহায় নারীদের সহায়তায় সরকার চালু করেছে ভিডব্লিউবি কর্মসূচি, যেটি সাধারণভাবে ভিজিডি কার্ড নামে পরিচিত। উদ্দেশ্য একটাই, যেসব নারী বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, স্বামী অসুস্থ বা পঙ্গু, কিংবা ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী এমন পরিবারে বাস করেন যেখানে প্রতিদিনের খাবারের নিশ্চয়তা নেই, তাদের জন্য সরকারের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
কিন্তু জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নে সেই মানবিক কর্মসূচিই হয়ে উঠেছে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, গরিবের প্রাপ্য সেই ভিজিডি কার্ডের তালিকায় উঠে এসেছে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না খাতুনের নাম।
তালিকায় দেখা যায় স্বপ্না খাতুনের নামের পাশে স্বামীর নামের স্থানে গোপনে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর পিতা আব্দুল হামিদ এর নাম। অর্থাৎ, বিষয়টি যাতে সবাই বুঝতে না পারে এজন্য কার্ডের প্রকৃত স্বত্বাধিকারী হিসেবে চেয়ারম্যানের নাম না ব্যবহার নাম করে তার শ্বশুরের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- এটা শুধু অনৈতিক নয়, আইনবিরোধীও বটে। ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধি তার পরিবারের সদস্যকে সরকারি সুবিধা দিতে পারেন না। আমরা দ্রুত তদন্ত ও পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।
ওই ইউনিয়নের ছবিলাপুর এলাকার বাসিন্দা বাতেন মিয়া বলেন- যাদের ঘরে চুলা জ্বলে না, যাদের সন্তান না খেয়ে ঘুমায়, তাদের জন্য সরকারের এই কর্মসূচি। অথচ একজন জনপ্রতিনিধি নিজের স্ত্রীকে সুবিধাভোগী বানিয়ে গরিবের হক মেরে দিয়েছেন। এটা লজ্জাজনক ও দুঃখজনক।
ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন- বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে কোনো জনপ্রতিনিধির পরিবারের কারও নামে কার্ড দেওয়া যায় না এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। পরে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার এক ফুফাত বোন প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন। তার জন্যই স্ত্রীর নামে কার্ড করেছি।
তবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুন নাহার এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।
জামালপুর জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুর আলম বলেন- জনপ্রতিনিধি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা কোনোভাবেই ভিজিডি কার্ডের সুবিধাভোগী হতে পারেন না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম. আলমগীর বলেন- আমি আগে বিষয়টি জানতাম না। এখন শুনেছি, তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




