দেওয়ানগঞ্জপ্রধান খবর

পানি ফল চাষে কৃষকের বাজিমাৎ

মহসিন রেজা রুমেল,দেওয়ানগঞ্জ : জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পতিত জলমগ্ন জমিতে পানি ফল চাষ করে বাজিমাৎ করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাটি নদী বেষ্টিত অঞ্চল হওয়ায় উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলেই কম বেশি পানি ফলের চাষ হয়। অধিক পরিমাণে পানি ফল চাষ হওয়ায় পানি ফল বিক্রির জন্য দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে প্রতিদিন বসে পানি ফলের হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটে পাইকাররা আসেন পানি ফল কিনতে। হাট ইজারাদারের দাবি প্রতিদিন হাটে পানি ফল বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০টন। এদিকে পতিত জমিতে অল্প খরচে পানিফল চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন কৃষকেরা।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে- এ বছর উপজেলায় ৩৯ হেক্টর পতিত জলমগ্ন জমিতে পানি ফলের চাষ হয়েছে। দিন দিন পানিফলের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের ডালবাড়ি এলাকার পানি ফল চাষি আলতাফ হোসেন বলেন- ‘এ বছর চার বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছি। তাতে সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার পানি ফল বিক্রি করেছি আরও ২৫-২৬ মণ পানি ফল ক্ষেতে আছে। যা আরও ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো।’

বালুগ্রামের ফরহাদ হোসেন ১৫ বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছেন। তিনি বলেন- অন্যান্য চাষের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সার ব্যবহার হলেও পানিফল চাষে অল্প পরিমানে ইউরিয়া সারের ব্যাবহার করতে হয়। বিঘা প্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয় আর পোকার আক্রমণ হলে বিষ প্রয়োগ করতে হয়।  এছাড়া আর তেমন কোন খরচ নেই, যে কারণে পানি ফল চাষে খরচের তুলনায় অধিক লাভবান হওয়া যায় ‘

পানি ফল চাষি বিশু ডিলার বলেন- ‘বর্ষার সময় পতিত নিচু জমি, ডোবা, জলাশয়ে পানি ভরা থাকে । সেই জমিতে অল্প খরচে পানি ফল চাষ করা হয়। আমার ১০ বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে ১৫-১৬ মণ পানি ফল উৎপাদন হয়। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে এ ফল চাষ করছি। কোনবারই লোকসানে পরতে হয়নি। প্রতিবছরই লাভবান হয়েছি।

পানি ফল বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন- দেওয়ানগঞ্জ থেকে পানিফল কিনে নিয়ে জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। ওসব অঞ্চলে পানি ফলের চাষ না থাকায় ওসব অঞ্চলে এর বেশ কদর রয়েছে। খুচরা বাজারে পাঁকা পানি ফল ৩০টাকা ও কাঁচা পানি ফল ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

পানি ফল হাটের ইজারাদার মনির হোসেন জানান- ‘প্রতি হাটে ৮-১০ টন পানিফল বিক্রি হয়। জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, গাইবান্ধা জেলার ,ফুলছড়ি, পলাশবাড়ি, কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর, রৌমারি অঞ্চলের শতশত পাইকার এ হাট থেকে পানি ফল কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে পাঁকা পানি ফল ১৩০০-১৪০০ টাকা মণ আর কাঁচা পানি ফল ৫০০-৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জের পানি ফল হাট অক্টোবরের শুরুর দিকে শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত এ হাট চলবে।

এসব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়া জানান- পতিত জলমগ্ন জমি, খাল, ডোবা,পুকুর, জলাশয়ে পানিফল চাষ করা যায়। কৃষি অফিস থেকে পানিফল চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। পানিফল চাষে অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে দিন দিন পানিফল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

Related Articles

Back to top button