দুর্নীতির আখড়া মেলান্দহের ভূমি অফিস
সাকিব আল হাসান নাহিদ, মেলান্দহ: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চলছে ঘুষ বাণিজ্যের মহোৎসব। সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া, ফাইল আটকে রাখা, এমনকি ঘুষের বিনিময়ে ভূমিসেবা প্রদান, সবকিছুই যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি অফিসের ভেতরে ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে- ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও কর্মচারী মজনু মিয়া মিলে পুরো অফিসে ঘুষ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা না দিলে মাসের পর মাস ফাইল আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- কোনো জমির নামজারি করতে অনলাইনে আবেদন করার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকেই শুরু হয় হয়রানি। অফিস থেকে প্রত্যয়ন নিতে গেলেই দিতে হয় ঘুষ। গ্রামের সাধারণ মানুষ ভূমি কর দিতে গেলেও নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অফিসের ভেতরে সেবাপ্রার্থীরা লাইনে অপেক্ষা করছেন। কর্মকর্তা কাগজে ত্রুটি দেখিয়ে কর্মচারী মজনু মিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেন। মজনুর সঙ্গে অর্থ লেনদেনের পরেই কাজ এগোয়।
একাধিক সেবাপ্রার্থী জানান, মজনু মিয়া অনলাইন আবেদন করার জন্য পাশেই সাগর দেবনাথের প্রান্ত ডিজিটাল স্টুডিও নামে এক কম্পিউটারের দোকানে পাঠান, যেখানে আবেদন প্রতি ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। ওই টাকার একটি অংশ কমিশন হিসেবে পান মজনু। এমনকি ২০০ টাকার ভূমিকরের জন্য ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের।
বাগবাড়ি এলাকার শাহজাহান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- `দালাল ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না। রবিউল নামে এক দালাল আমার ৬০ শতাংশ জমির খারিজের জন্য ৬ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে আরও ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেছে। না দেওয়ায় তিন মাস ধরে ফাইল আটকে রেখেছে।’
আরেক ভুক্তভোগী জিয়াউল ইসলাম বলেন- টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আমি একটা খারিজের জন্য অনেক দিন ধরে ঘুরছি। তারা অতিরিক্ত টাকা চাইছে, না দিলে কাজ এগোয় না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঘুষ লেনদেনের ভিডিও নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা আক্তার জ্যোতি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুমী আক্তার বলেন, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জানলাম। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




